
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্মতি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা ঘোষণা করেন। তবে, এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার মধ্যে যে ‘মূল দ্বন্দ্ব’ রয়েছে, তার সমাধানের শর্ত জুড়ে দিয়েছেন পুতিন। এই শর্তগুলো বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের জন্য গ্রহণযোগ্য হওয়া কঠিন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ‘রাশিয়া সম্পাদক’ ভিটালি শেভচেনকো তাঁর বিশ্লেষণে বলেছেন, পুতিনের এই ‘হ্যাঁ’ আসলে ছদ্মবেশী ‘না’। তিনি অবাক হননি পুতিনের এই অবস্থানে, কারণ তাঁর দেওয়া শর্তগুলো ইউক্রেনের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে। শেভচেনকো জানান, পুতিনের শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা গ্রহণ, সেনা সমাবেশ এবং রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রত্যাহার বন্ধ করতে হবে। এমনকি কুরস্কে থাকা সেনাদের হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়তো মৃত্যুবরণ করতে হবে। অর্থাৎ, তাদের প্রত্যাহারের কোনো সুযোগও দেওয়া হবে না।
পুতিনের ‘মূল দ্বন্দ্ব’ নিরসনের শর্ত:
বিবিসির এই বিশ্লেষক আরও জানান, পুতিনের কাছে ‘মূল দ্বন্দ্ব’ বলতে ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নটিই প্রধান। তাঁর শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেন দেশে বা বিদেশে নিজস্ব নীতি গ্রহণের স্বাধীনতা হারাবে। এর মানে, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তারা ন্যাটো বা অন্য কোনো জোটে যোগ দিতে পারবে না। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদও তাদের জন্য নিষিদ্ধ হবে। শেভচেনকোর মতে, এই শর্তগুলো ইউক্রেনের স্বাধীন অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ও কৌশল:
ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য ‘বল এখন রাশিয়ার কোর্টে’। পুতিন এই বলটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি সরাসরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান না করে এমন শর্ত জুড়েছেন, যা কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব। বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পুতিন এখানে কৌশলী ভূমিকা পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্প্রতি সম্পর্কের উন্নতি হওয়ায় তিনি তাদের প্রস্তাবকে সরাসরি ‘না’ বলতে চাননি। বরং ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে প্রত্যাখ্যানের পথ বেছে নিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা:
পুতিনের এই শর্তসাপেক্ষে সম্মতি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করে দিয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, পুতিনের প্রস্তাবিত শর্তগুলো ইউক্রেনের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা এখন খুবই কম। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইতিমধ্যে পুতিনের এই প্রতিক্রিয়াকে ‘ম্যানিপুলেটিভ’ আখ্যা দিয়ে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনের এই বক্তব্যকে ‘আশাব্যঞ্জক’ বলে মন্তব্য করলেও জানিয়েছেন, এটি এখনও অসম্পূর্ণ। তিনি পুতিনের সঙ্গে ফোনে আলোচনার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের শর্তগুলো পূরণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন রাজি না হলে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী আলোচনায় রূপ নিতে পারে, যা যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।
সূত্র: বিবিসি