
টাকা থাকলে নাকি বাঘের চোখও মেলে—এমন প্রবাদ আমরা সবাই শুনেছি। কিন্তু টাকার বিনিময়ে স্ত্রী কেনার কথা শুনেছেন কি? অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। বুলগেরিয়ায় এমনই এক বাজার রয়েছে, যেখানে টাকার বিনিময়ে কনে কেনা-বেচা হয়। এই বাজার সেদেশে একেবারেই বৈধ এবং স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ।
বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের বাজার দেখা যায়, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে নানান পণ্য বিক্রি হয়। কিন্তু বুলগেরিয়ার স্টারা জাগোরা শহরে বসে এক অভিনব বাজার, যেখানে বিক্রি হয় কনে। এই বাজারটি স্থানীয় কালাইদঝি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ। প্রতি বছর অর্থোডক্স খ্রিস্টান লেন্টের প্রথম শনিবার এই বাজার বসে।
এই বাজারে সম্ভাব্য কনেরা সাজগোজ করে, গয়না পরে হাজির হন। হাই হিল জুতো আর মিনি স্কার্ট পরে তারা পুরুষদের আকর্ষণের চেষ্টা করেন। কনের সঙ্গে তাদের মায়েরাও উপস্থিত থাকেন। মায়েরা মনে গর্ব বোধ করেন, কারণ তারা তাদের সমাজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে পেরেছেন।
কালাইদঝি সম্প্রদায় মূলত তামার কাজের সঙ্গে জড়িত। এই সম্প্রদায়ের মানুষরা ১২-১৪ শতকে বুলগেরিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য অংশে বসতি স্থাপন করে। তাদের সমাজের নিয়ম অনুযায়ী, গ্রামে একে অপরের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসবাস করতে হয়। গ্রামের পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে নারীদের দেখা করার অনুমতি নেই।
এই সম্প্রদায়ের মেয়েদের জন্য বিয়ের একমাত্র উপায় হলো এই কনের বাজার। সম্প্রদায়ের বাইরে বিয়ে করার কোনো সুযোগ নেই তাদের। বাজারে পুরুষরা কনের সঙ্গে কথা বলে, তারপর পছন্দ হলে দাম ঠিক করে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ বৈধ এবং স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ।
আধুনিক যুগে এমন বাজারের কথা শুনে বিশ্ববাসী চমকে উঠেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বাজারে পুরুষরা শুধু বউ কেনেন না, বরং মেয়েদের কুমারীত্ব কেনেন। এই প্রথা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও স্থানীয়রা এটিকে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই দেখেন।
স্টারা জাগোরা শহরের এই বউ বাজার শুধু একটি বিয়ের বাজার নয়, এটি আনন্দ ও উৎসবেরও স্থান। নাচ-গান, গল্প-আড্ডা আর পানাহারে মুখর থাকে গোটা শহর। এই বাজারটি জিপসি ব্রাইড মার্কেট নামেও পরিচিত।
বুলগেরিয়ার এই কনের বাজার বিশ্বের কাছে এক অদ্ভুত ও চমকপ্রদ ঘটনা। তবে স্থানীয়দের জন্য এটি তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত উদাহরণ।
সূত্র: এনডিটিভি