
কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় শুঁটকি মাছ। এই প্রক্রিয়ায় মাছের জলীয় অংশ শুকিয়ে যায়, যার ফলে মাইক্রো-অর্গানিজম জন্মাতে পারে না। এটি মাছকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের উপযোগী করে তোলে। বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতিতে শুঁটকি মাছের রয়েছে বিশেষ স্থান। অনেকে ভর্তা বা ভুনা করে এটি খেতে পছন্দ করেন। তবে শুঁটকির তীব্র গন্ধ অনেকের কাছে অসহনীয়। কিন্তু এই খাবারের পুষ্টিগুণ ও সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে অনেকেই অজানা।
শুঁটকি মাছের উপকারিতা
শুঁটকি মাছ শুধু স্বাদের জন্য নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো:
- প্রোটিন: শুঁটকিতে ৮০-৮৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে, যা ডিমের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। গর্ভবতী মহিলা ও ক্ষীণকায় ব্যক্তিদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: এই উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
- সোডিয়াম: সঠিক মাত্রায় সোডিয়াম থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হাইপারটেনশন রোগীদের জন্য উপযোগী।
- পটাশিয়াম: দেহে জলের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রমে সহায়তা করে।
- ফসফরাস: হাড়, দাঁত এবং ডিএনএ-আরএনএ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া, শুঁটকি মাছে কোলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকায় হৃদ্রোগ ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিশ্চিন্তে এটি খেতে পারেন। ক্যালরি কম থাকায় ওজন কমাতে চান এমন ব্যক্তিরাও তাদের খাদ্যতালিকায় শুঁটকি যোগ করতে পারেন।
যাঁদের জন্য নিষেধ
শুঁটকি সবার জন্য উপকারী নয়। যাঁদের কিডনি রোগ রয়েছে বা রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি, তাঁদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। এ ধরনের রোগীদের শুঁটকি এড়িয়ে চলাই ভালো।
শুঁটকি: ভালোবাসা না বিরক্তি?
বাঙালির রান্নাঘরে শুঁটকি একটি পরিচিত নাম হলেও এর গন্ধ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ এটিকে স্বাদের জন্য পছন্দ করেন, কেউ গন্ধের কারণে দূরে থাকেন। তবে এর পুষ্টিগুণ জানলে অনেকেই হয়তো শুঁটকির প্রতি নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবেন। সঠিকভাবে প্রস্তুত করা শুঁটকি যেমন স্বাদে অতুলনীয়, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। তবে কিডনি রোগীদের জন্য এটি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
শুঁটকি মাছ বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের একটি অংশ হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। আপনি শুঁটকি পছন্দ করুন বা না করুন, এর পুষ্টিগুণ অস্বীকার করার উপায় নেই।