আসানসোলের মিঠানী গ্রামে দোলের আগের রাতে কোন উৎসব পালিত হয় জানেন? নারায়ণকে সাক্ষী রেখে আজও পাতানো হয় ‘বন্ধু’

আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া, কাল আমাদের দোল… এই প্রচলিত বাঙালি রীতি অনুসারে দোলের আগের রাতে ন্যাড়াপোড়ার উৎসব পালিত হয়ে আসছে। তবে আসানসোলের মিঠানী গ্রামে দোলের আগের রাতে পালিত হয় এক অনন্য অগ্নি উৎসব, যার নাম ‘চাঁচর’।

চাঁচর উৎসবের ঐতিহ্য

এই উৎসব ঘিরে গ্রামে তিনটি প্রাচীন শালগ্রাম শিলার পুজো হয়— পাত্র পরিবারের লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ, চট্টরাজ পরিবারের বাসুদেবচন্দ্র জিউ এবং চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দামোদর চন্দ্র। এই শালগ্রাম শিলাগুলিকে নিয়ে ঢাক-ঢোল সহযোগে গ্রামে শোভাযাত্রা বের হয়। শেষে গ্রামের এক প্রান্তে খড়ের ঘরের মধ্যে পুজো সম্পন্ন হয়, তারপর সেই ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

বন্ধু পাতানোর রীতি

চাঁচর উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হল ‘বন্ধু পাতানো’ বা ‘চাঁচর’। নারায়ণকে সাক্ষী রেখে প্রিয় বন্ধুর গালে আবির লাগিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে ও উপহার দিয়ে বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এই রীতি শতাধিক বছরের পুরনো এবং আজও মিঠানী গ্রামে অটুট রয়েছে।

উৎসবের আয়োজন

লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির থেকে শুরু করে দামোদর মন্দির ও বাসুদেব মন্দির পর্যন্ত তিনটি শালগ্রাম শিলার শোভাযাত্রা হয়। এরপর খড়ের ঘরে আগুন লাগানোর পর আতশবাজির প্রদর্শনী হয়, যা দেখতে গ্রামের মানুষসহ আশেপাশের এলাকার মানুষও ভিড় করেন।

গ্রামের ঐতিহ্য

আসানসোলের মিঠানী গ্রাম তার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আভিজাত্যের জন্য পরিচিত। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই চাঁচর উৎসব গ্রামের ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন।

বন্ধুত্বের মেলবন্ধন

চাঁচর পাতাতে আসা কিশোরী থেকে প্রবীণরা সবাই এই ঐতিহ্যে অংশ নেন। নারায়ণকে সাক্ষী রেখে দেওয়া বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি এখানকার সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

এই চাঁচর উৎসবের মাধ্যমে দোলের রঙে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যের এক অনন্য রূপ দেখা যায়, যা বাংলার সংস্কৃতির গৌরব বৃদ্ধি করে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy