“যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি রাশিয়া”- ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পরেই মুখ খুললেন পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে রাশিয়া নীতিগতভাবে সম্মত। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে নিয়ে যেতে হবে এবং ইউক্রেন সংঘাতের মূল কারণগুলির সমাধান করতে হবে। ক্রেমলিনে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন পুতিন।
পুতিন বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে সমর্থন করি। তবে এই বিরতি এমন হতে হবে যাতে এটি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং এই সংকটের মূল কারণগুলি দূর হয়।” তিনি ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে যোগ করেন, “মূল ধারণাটি সঠিক, এবং আমরা অবশ্যই এটিকে সমর্থন করি। তবে কিছু বিষয় রয়েছে যা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। আমি মনে করি, আমাদের আমেরিকান সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।” তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে তিনি শীঘ্রই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে আলোচনার কথা বিবেচনা করছেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাব ও ইউক্রেনের সম্মতি
তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার তাঁর অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন। বুধবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি রাশিয়াকে ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে ইউক্রেন ইতিমধ্যে সম্মতি জানিয়েছে। তিনি এই প্রস্তাবকে ‘রক্তস্নান’ বন্ধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বৃহস্পতিবার মস্কো পৌঁছেছেন এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য।
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ভূখণ্ডে অগ্রসর হচ্ছে এবং বর্তমানে তারা ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমাঞ্চলের কুর্স্ক অঞ্চলে রুশ সেনার অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। বুধবার পুতিন সামরিক পোশাক পরে কুর্স্কে একটি সামরিক কমান্ড পোস্ট পরিদর্শন করেন এবং সেখানে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। এই অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির শর্তে পুতিনের জোর
পুতিন স্পষ্ট করেছেন যে, যুদ্ধবিরতি কেবল একটি সাময়িক বিরতি হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, “এই বিরতি যদি ইউক্রেনকে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেয়, তবে তা আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ করবে না।” তিনি যুদ্ধবিরতির সময় কীভাবে এর শর্তাবলী পালন নিশ্চিত করা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। পুতিনের এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, রাশিয়া এই প্রস্তাবে সম্মত হলেও তাদের নিজস্ব শর্ত জুড়তে চায়, যার মধ্যে ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা সীমিতকরণ এবং পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবি থাকতে পারে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি
এই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার দিকে এখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি নিবদ্ধ। রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে আলোচনার ফলাফলই নির্ধারণ করবে এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এর আগে বলেছেন, তিনি একটি স্থায়ী শান্তি চান, কোনও ‘হিমায়িত সংঘাত’ নয়। অন্যদিকে, ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি তারা এই প্রস্তাবে সম্মত না হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের এই শর্তসাপেক্ষ সম্মতি আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং আলোচনার ফলাফল এই সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী দিনগুলিতে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কথোপকথনই নির্ধারণ করবে, এই যুদ্ধবিরতি সত্যিই শান্তির পথে নিয়ে যায় কি না।