MOBILE গেমে আসক্ত সন্তান, বাবা মায়ের 24 লাখ গায়েব অ্যাকাউন্ট থেকে

তামিলনাড়ুর থেনি জেলার এক পরিবারের সন্তান মোবাইলে গেম খেলতে গিয়ে অজান্তেই জালিয়াতির ফাঁদে পড়েছে। ফলস্বরূপ, পরিবারের তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ২৪ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬০০ টাকা চলে গেছে অচেনা ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্টে। ঘটনাটি ঘটেছে টানা তিন মাস ধরে, কিন্তু ব্যস্ত মা-বাবা তা টেরও পাননি। শেষমেশ ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা গায়েব হওয়ার খবর জানতে পেরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

মোবাইল গেমের ফাঁদে সন্তান
শ্রীনিবাসন তামিলনাড়ুর থেভারাম এলাকার বাসিন্দা। তিনি একটি মুদিখানার দোকান চালান, আর তাঁর স্ত্রী ইমিটেশন গয়নার দোকান দেখাশোনা করেন। ব্যবসায় ব্যস্ত থাকায় তাঁদের সন্তান বেশিরভাগ সময় বাড়িতে মোবাইল নিয়ে কাটায়। সময় কাটানোর জন্য সে বিভিন্ন অনলাইন গেম খেলত এবং গেমিং অ্যাপ ডাউনলোড করত। এই প্রক্রিয়ায় সে ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ, শেয়ার করে ফেলে। এই তথ্য ব্যবহার করে জালিয়াতরা পরিবারের তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করে।

তিন মাস পর ধরা পড়ল ঘটনা
টানা তিন মাস ধরে শ্রীনিবাসনের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি হচ্ছিল, কিন্তু তিনি বা তাঁর স্ত্রী তা টের পাননি। তিন মাস পর ব্যাঙ্কে গিয়ে তিনি জানতে পারেন যে তাঁর তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ২৪ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬০০ টাকা তোলা হয়েছে। এই টাকা ৯টি আলাদা আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঘটনাটি জানার পর তিনি থেনি সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
পুলিশ তদন্তে জানা যায়, শ্রীনিবাসনের সন্তান গেমিং অ্যাপ ডাউনলোড করতে গিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করেছিল। এই তথ্য ব্যবহার করে জালিয়াতরা ধাপে ধাপে টাকা চুরি করেছে। পুলিশ ফোনটি পরীক্ষা করে এবং সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে কীভাবে ব্যাঙ্কের তথ্য চুরি করা হয়েছিল, তা জানতে পারে।

তদন্তের সূত্র ধরে পটনা থেকে অর্জুন কুমার নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। অর্জুনের অ্যাকাউন্টেও চুরি করা টাকা জমা হয়েছিল। তবে অর্জুন দাবি করে যে সে সরাসরি এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নয়। সে জানায়, কিছু অজ্ঞাত পরিচয় যুবক তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার বিনিময়ে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। অর্জুনের অ্যাকাউন্টে চুরি করা টাকার একটি অংশ জালিয়াতরা নিয়ে নেয়, বাকি অংশ তার অ্যাকাউন্টেই থেকে যায়।

জালিয়াতির নেপথ্যে কে?
অর্জুনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সে একা নয়, তার বেশ কিছু বন্ধুও একইভাবে অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করে। পুলিশ এখন বাকি আটটি অ্যাকাউন্টের মালিকদের খোঁজ করছে এবং তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জালিয়াতির মূল হোতাদের ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

সতর্কবার্তা
এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, অনলাইন গেমিং এবং অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের অনলাইন সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অ্যাকাউন্ট চেক করা এবং দুদক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

এই ঘটনা সাইবার জগতে সুরক্ষা ও সচেতনতার গুরুত্বকে আরও একবার তুলে ধরেছে। পুলিশের তদন্ত চলছে, এবং আশা করা হচ্ছে যে শীঘ্রই জালিয়াতদের ধরা পড়বে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy