“আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই”- ইউক্রেনের বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের সতর্কবার্তা পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনীয় বাহিনীর হয়ে লড়াইরত বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের উদ্দেশে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ইউক্রেনীয় সেনারা যেসব সুরক্ষা ও অধিকার ভোগ করবেন, বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। বুধবার ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী ক্রুস্ক প্রদেশ পরিদর্শনে গিয়ে রুশ সেনাবাহিনীর কমান্ডার ও জেনারেল স্টাফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এই মন্তব্য করেন তিনি।

ক্রুস্ক প্রদেশে গত কয়েক মাস ধরে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ইউক্রেনীয় সেনারা এই প্রদেশের বড় একটি অংশ দখল করে নিলেও গত ফেব্রুয়ারির শেষে রুশ বাহিনী বেশিরভাগ এলাকা পুনরুদ্ধার করে। এই অভিযানের সময় বেশ কয়েকজন ইউক্রেনীয় ও বিদেশি ভাড়াটে সেনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুতিনের বক্তব্য
বৈঠকে পুতিন বলেন, “১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনে বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের সুরক্ষার কোনো বিধান নেই। যারা ক্রুস্কে বেসামরিক জনগণের ক্ষতি করেছে, আমাদের সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশেষ সার্ভিসের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে, রাশিয়ার আইন অনুযায়ী তারা সন্ত্রাসী। রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় ও তদন্ত কমিটি এই ঘটনার তদন্ত এই দৃষ্টিকোণ থেকেই শুরু করেছে।”

তিনি জানান, ক্রুস্কে বন্দি ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে যারা ইউক্রেনের নাগরিক, তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হবে। বন্দি বিনিময়ের সময় তাদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং বন্দি থাকাকালীন রাশিয়া ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সব সুরক্ষা প্রদান করা হবে। তবে বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। পুতিন বলেন, “তারা সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচিত হবে এবং রাশিয়ার বিচার ব্যবস্থায় সন্ত্রাসীদের যেভাবে বিচার করা হয়, তাদেরও সেভাবে বিচার করা হবে।”

ক্রুস্কে সংঘাত ও অভিযোগ
ক্রুস্কে ইউক্রেনীয় দখলদারিত্বের সময় সাধারণ মানুষের ওপর খুন, ধর্ষণ, লুটপাট ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। রুশ সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে অনেকেই এসব অপরাধে জড়িত বলে দাবি করা হচ্ছে। এই অভিযোগের তদন্তে নেমেছে রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেলের দপ্তর। পুতিনের সতর্কবার্তা এই তদন্তের প্রেক্ষাপটেই এসেছে।

আন্তর্জাতিক আইনের প্রেক্ষাপট
১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, নিয়মিত সেনারা যুদ্ধবন্দি হিসেবে নির্দিষ্ট সুরক্ষা পান। কিন্তু ভাড়াটে সেনাদের এই সুবিধা দেওয়া হয় না। রাশিয়া এই নীতির ভিত্তিতেই বিদেশি যোদ্ধাদের সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করছে। এর আগে রাশিয়ার আদালত বেশ কয়েকজন বিদেশি ভাড়াটে সেনাকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে।

ক্রুস্কের বর্তমান পরিস্থিতি
গত আগস্টে ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতে ক্রুস্কের বড় অংশ দখল হওয়ার পর থেকে এই প্রদেশ যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে রুশ সেনারা বেশিরভাগ এলাকা পুনরুদ্ধার করলেও, কিছু অংশে এখনও সংঘর্ষ চলছে। পুতিনের এই সফর ও সতর্কবার্তা ক্রুস্কে রুশ নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার প্রচেষ্টারই অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: আরটি

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy