
পশ্চিমবঙ্গের আগামী বিধানসভা নির্বাচন এখনও এক বছর দূরে থাকলেও রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলিতে কোন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ভবানীপুর কেন্দ্র, যেখান থেকে দীর্ঘদিন ধরে জয়ী হয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এবার তাঁর বিরুদ্ধে কে প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক চর্চা তুঙ্গে উঠেছে।
সম্প্রতি বিধানসভার বাইরে এক বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একটি চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আপনাকে ভবানীপুরে হারাব। আরও ৫ বছর হারার যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে।” শুভেন্দুর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জনের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন— তবে কি ২০২৬ সালের নির্বাচনে ভবানীপুর থেকে মমতার বিরুদ্ধে লড়তে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী?
এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শুভেন্দুর সম্ভাব্য প্রার্থীত্ব নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “শুভেন্দুবাবু যদি ভবানীপুরে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার প্রস্তাব দেন, তাহলে আমরা সেটা সাদরে গ্রহণ করব।” সুকান্ত আরও দাবি করেন, “আমার বিশ্বাস, ভবানীপুরে শুভেন্দু অধিকারী লড়াই করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরাজিত হবেন।” তাঁর এই বক্তব্য ভবানীপুর কেন্দ্রকে ঘিরে জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে।
যদিও শুভেন্দু অধিকারী এখনও স্পষ্টভাবে জানাননি যে তিনি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোন কেন্দ্র থেকে লড়বেন। বিজেপির তরফেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা করা হয়নি। তবে সম্প্রতি ভবানীপুরে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে শুভেন্দুর সক্রিয় উপস্থিতি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন। সেই জয়ের পর মমতা ভবানীপুরে উপনির্বাচনে লড়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদে ফিরে আসেন। এবারও কি শুভেন্দু মমতার বিরুদ্ধে ভবানীপুরে নামবেন? নাকি বিজেপি অন্য কোনও শক্তিশালী প্রার্থীকে এই কেন্দ্রে দাঁড় করাবে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী দিন পর্যন্ত।
ভবানীপুর কেন্দ্রটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য শুধু রাজনৈতিকই নয়, আবেগের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে তিনি বারবার জয়ী হয়ে নিজের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছেন। তবে শুভেন্দুর মতো একজন প্রভাবশালী নেতা যদি এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে ভবানীপুরে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতির এই নাটক কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকে নজর রাখছে গোটা বাংলা।