
ধর্মীয় মন্তব্য ঘিরে বুধবার বিধানসভায় কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল পশ্চিমবঙ্গের আইনসভা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘চ্যাংদোলা’ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদে সরব তৃণমূল বিধায়করা। পাল্টা প্রতিবাদে বিজেপির বিধায়করাও সরব হন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই বিধানসভার অন্দরে প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্রের খবর, বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি মন্তব্য করেন, সংখ্যালঘু বিধায়কদের ‘চ্যাংদোলা করে’ বাইরে ফেলে দেওয়া হবে। এই মন্তব্য ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় প্রবেশের আগেই তৃণমূল বিধায়ক গোলাম রব্বানি-সহ অন্যরা এর প্রতিবাদে সরব হন এবং নিন্দা প্রস্তাব আনেন। মুহূর্তের মধ্যেই বিজেপি বিধায়করা পাল্টা চিৎকার-স্লোগান দিতে শুরু করেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে স্পিকার বারবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।
বিধানসভায় বিজেপির লাগাতার বিক্ষোভের মাঝেও নিজের বক্তব্য রাখতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,“আপনারা ধর্মীয় কার্ড খেলেন। সবচেয়ে বড় ধর্ম মানবিকতা। ধর্মের নামে জালিয়াতি করবেন না।”আমি একজন হিন্দু। আমাকে আপনাদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে?”বাংলাকে অবমাননা করবেন না। বাংলা ভাগ করার চেষ্টা করবেন না। আপনারা কেন মুসলিমদের টিকিট দেন না? আমি তো ৭৯ শতাংশ হিন্দুদের টিকিট দিই, মহিলাদেরও সুযোগ দিই।”
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, রোজার মাসকে টার্গেট করে মুসলিমদের আঘাত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করে বলেন, “সংখ্যালঘুরা নিশ্চিন্তে থাকুন, সর্বধর্ম সমন্বয় জিন্দাবাদ।”
বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন,“ফিরহাদ হাকিম, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, হুমায়ূন কবির প্রতিদিন হিন্দুদের আক্রমণ করেন। তাঁদের বেলায় কী হবে?”একের পর এক পাল্টা মন্তব্যে বিধানসভার উত্তেজনা চরমে ওঠে।
বিজেপি ও তৃণমূল দুই পক্ষই স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। বিধানসভার স্পিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও সফল হননি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার মাঝেই বিজেপি বিধায়করা লাগাতার চিৎকার করতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীকেও কিছুক্ষণের জন্য বক্তৃতা থামাতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাটি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির অংশ। বিজেপি এবং তৃণমূল দুই পক্ষই তাদের সমর্থকদের মন জয় করতে এই ইস্যুকে ব্যবহার করতে চাইছে।
এই বিতর্ক নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের তরফে আরও তীব্র রাজনৈতিক লড়াই দেখা যেতে পারে। ইতিমধ্যেই দুই দলই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।