
বাংলা থেকে শুরু করে গোটা দেশজুড়ে ছোটপর্দায় নাচ ও গানের প্রতিযোগিতা ব্যাপক জনপ্রিয়। ছোটদের জন্য যেমন আলাদা শো থাকে, তেমনই বড়দের জন্যও থাকে বিশেষ প্রতিযোগিতা। কিন্তু একজন নৃত্যশিল্পীর ঘরে জন্ম নেওয়া, যাঁকে প্রথম পরিচিতি এনে দিয়েছিল নাচ, সেই মমতা শঙ্কর (Mamata Shankar) কেন কখনও কোনও নাচের প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে থাকেন না? একাধিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে তাঁকে দেখা গেলেও, বিচারকের আসনে তিনি বসতে চান না।
নাচের মঞ্চে প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নন মমতা
এ বিষয়ে এবিপি লাইভের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মমতা শঙ্কর জানালেন, তিনি নাচের প্রতিযোগিতার বিচারক হওয়ার পক্ষে নন। তাঁর মতে, নাচের আসল প্রতিযোগিতা নিজের সঙ্গে নিজের হওয়া উচিত। মমতা বললেন, “আমি এই ধরনের প্রতিযোগিতায় খুব একটা বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয়, প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত নিজের সীমা অতিক্রম করার জন্য। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়াই আসল নাচের সৌন্দর্য। তাই বিচারক হয়ে এই ধরনের প্রতিযোগিতার অংশ হতে চাই না। তবে অতিথি হিসেবে শো দেখতে আমার ভালো লাগে।”
বিচারক হিসেবে থাকেন না, কারণটা কী?
মমতা শঙ্করের মতে, তিনি বিচারক হলে প্রচলিত ধাঁচের প্রশংসার বাইরে গিয়ে সঠিক কথাই বলবেন। তিনি বলেন, “আমি যে খুব অন্যরকমভাবে বিচার করব, সেটাই তো সমস্যা! আমি শুধু বলব না, ‘তোমায় খুব সুন্দর লাগছে’ বা ‘তোমার এনার্জি দারুণ’। বরং ভুল থাকলে তা স্পষ্টভাবে ধরিয়ে দেব, যাতে শিল্পী পরবর্তী সময়ে আরও ভালো করতে পারে। ভালো হলে নিশ্চয়ই প্রশংসা করব।”
তবে ছোটদের নাচের প্রতিযোগিতার একটি দিক নিয়ে তিনি বিশেষভাবে আপত্তি জানান। তাঁর মতে, “আমি মেনে নিতে পারি না যে ছোট ছোট মেয়েরা বড়দের মতো অঙ্গভঙ্গি করে, মুখভঙ্গি করে নাচবে। বাচ্চারা বাচ্চাদের মতো থাকুক। এই প্রতিযোগিতার কারণে তারা যেন বনসাই গাছ হয়ে যাচ্ছে! ছোট্ট একটা গাছে ফল-ফুল হয়ে ঝরে পড়ছে। ওদের সরলতাটাই হারিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এতে বাচ্চাদের মনে এক ধরনের অহংকার জন্মায়। তারা ভাবে, ‘আমি বিশাল কিছু হয়ে গিয়েছি’। কারণ হঠাৎ তারা জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে, সবাই তাদের মাথায় তুলে নিচ্ছে। কিন্তু যখন সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারে না, তখন তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।”
সুতরাং, মমতা শঙ্করের মতে, নাচের প্রতিযোগিতার বিচারক না হওয়ার সিদ্ধান্ত একেবারেই তাঁর নীতিগত এবং ব্যক্তিগত। নাচকে প্রতিযোগিতার বাইরে রেখে শিল্প হিসেবে উপভোগ করাই তাঁর দর্শন।