
‘ভূতুড়ে’ ভোটার তথা একই এপিক (ইলেকট্রোরাল ফটো আইডেন্টিটি কার্ড) নম্বরে একাধিক ব্যক্তির নাম থাকার অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব তৃণমূল কংগ্রেস। এবার তারা নতুন করে দাবি করেছে, আধার কার্ডও ক্লোন করা হচ্ছে এবং সেই ক্লোন করা আধার ব্যবহার করে জাল ভোটার কার্ড তৈরি করা হতে পারে। এই গুরুতর অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে পৌঁছেছে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল।
মঙ্গলবার সন্ধে ৬টা নাগাদ তৃণমূলের ১০ জনের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। দলে ছিলেন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সাগরিকা ঘোষ, কীর্তি আজাদ-সহ অন্যান্যরা। তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন।
তৃণমূলের অভিযোগ ও প্রশ্ন
সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, “ডুপ্লিকেট ভোটার কার্ড একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুটি প্রথম সামনে আনার পর অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে। নির্বাচন কমিশন আগে জানিয়েছে যে তিন মাসের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু আমরা প্রশ্ন তুলেছি, যদি তারা ডুপ্লিকেট ভোটার কার্ডের সংখ্যাই না জানে, তাহলে কীভাবে সময়সীমা দিচ্ছে?”
তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “ভোটার কার্ড ঠিক করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এটা মানুষের আস্থার প্রশ্ন। আমরা ভুয়ো ভোটার নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছি, তার কোনও সদুত্তর কমিশনের কাছে নেই। তারা বলছে তিন মাসে সমস্যা মিটিয়ে ফেলবে, কিন্তু কতগুলো ভুয়ো ভোটার কার্ড আছে, কোথায় আছে—এর কোনও তথ্য তারা দিতে পারছে না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
আধার ক্লোনিং নিয়ে উদ্বেগ
তৃণমূলের অভিযোগ, শুধু ভোটার কার্ড নয়, আধার কার্ডও ক্লোন করা হচ্ছে। তারা বলছে, এই ক্লোন করা আধার কার্ডগুলো জাল ভোটার কার্ড তৈরিতে ব্যবহার করা হতে পারে। সাগরিকা ঘোষ আরও প্রশ্ন তুলেছেন, “নির্বাচন কমিশন কেন স্পষ্ট করে বলছে না যে আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ড লিঙ্ক করা ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়? এই ক্লোনিং ভোটার নিবন্ধনকে কীভাবে প্রভাবিত করছে, তা নিয়ে কমিশনের কী ব্যবস্থা?”
পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লি: ক্রমবর্ধমান চাপ
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম এই ইস্যুটি উত্থাপন করার পর থেকে তৃণমূল ক্রমাগত নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে। তারা দাবি করেছে, ভোটার তালিকায় ‘ভূতুড়ে’ ভোটারদের নাম যুক্ত করে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে তৃণমূল শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, দিল্লিতেও তাদের প্রতিবাদ জোরদার করেছে।
নির্বাচন কমিশন এর আগে জানিয়েছিল, এই ‘দশকের পুরোনো’ সমস্যার সমাধান তিন মাসের মধ্যে করা হবে। তবে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা এই প্রতিশ্রুতির যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করেছে, ভোটার তালিকায় সংশোধন, নতুন নাম যোগ এবং বাদ দেওয়ার বিষয়ে স্বচ্ছতা আনা জরুরি।
পরবর্তী পদক্ষেপ
তৃণমূলের এই পদক্ষেপ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকেও এই ইস্যুতে সোচ্চার হতে উৎসাহিত করেছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বুথ লেভেল অফিসার এবং ইলেকট্রোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসাররা এই সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন। তবে তৃণমূলের অভিযোগ এবং প্রশ্নের জবাবে কমিশনের স্পষ্ট অবস্থান এখনও সামনে আসেনি। এই ঘটনা আগামী দিনে ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।