
রঙের উৎসব হোলি ভারতজুড়ে ধুমধাম করে পালিত হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই এই দিনে রঙে রঙিন হয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। প্রতি বছর দেশের মানুষ এই উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। তবে এই উৎসাহ সব জায়গায় সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে না। ভারতের কিছু জায়গা এমন রয়েছে, যেখানে হোলি উদযাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আগামী ১৪ মার্চ, ২০২৫-এ যখন সারা দেশ হোলির রঙে মাতবে, তখনও এই অঞ্চলগুলো থাকবে নীরব ও রঙহীন। কী কারণে এই জায়গাগুলিতে হোলি পালিত হয় না, জানুন বিস্তারিত।
উত্তরাখণ্ডের গ্রামে দেবীর ভয়ে হোলি নিষিদ্ধ
উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলার খুরজান ও কুইলি নামে দুটি গ্রামে প্রায় দেড়শো বছর ধরে হোলির উৎসব পালিত হয় না। এই গ্রামের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, তাদের বংশের দেবী কোলাহল বা উৎসবের শব্দ পছন্দ করেন না। হোলির মতো উৎসব পালন করলে দেবী ক্রুদ্ধ হবেন এবং গ্রামে দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসবে। এই ভয় থেকেই গ্রামবাসীরা হোলির রঙ ও আনন্দ থেকে নিজেদের দূরে রাখেন।
গুজরাতের রামসানে ২০০ বছরের নিষেধাজ্ঞা
গুজরাত রাজ্যের রামসান (রামেশ্বর নামেও পরিচিত) গ্রামে ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হোলি উদযাপন বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ভগবান শ্রী রাম এই গ্রামে এসেছিলেন, যার জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে। এখানে হোলি না পালনের পিছনে দুটি কারণ প্রচলিত। প্রথমত, প্রায় ২০০ বছর আগে হোলিকা দহনের সময় গ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে গ্রামবাসীরা হোলি উদযাপন বন্ধ করে দেয়। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়, একবার ঋষি-সাধুরা গ্রামবাসীদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, হোলিকা দহন করলে গ্রামে আগুন লেগে যাবে। তাই এখানে হোলিকা পোড়ানো বা রঙে খেলার প্রথা নেই।
ঝাড়খণ্ডের দুর্গাপুরে রাজার শেষ ইচ্ছা
ঝাড়খণ্ডের দুর্গাপুর গ্রামে গত ১০০ বছর ধরে হোলি উৎসব পালিত হয় না। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই গ্রামের রাজার ছেলে হোলির দিনে মারা যান। পরের বছরই একই দিনে রাজার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে রাজা গ্রামবাসীদের বলে যান, এই গ্রামে হোলি উদযাপন করা উচিত নয়। তার শেষ ইচ্ছার মর্যাদা রক্ষায় গ্রামের মানুষ হোলির আনন্দ থেকে বিরত থাকেন।
সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রভাব
ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিতে যেমন উৎসবের উচ্ছ্বাস রয়েছে, তেমনই কিছু জায়গায় স্থানীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য উৎসবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই গ্রামগুলির মানুষ হোলির রঙে না মিশলেও তাদের ঐতিহ্য ও বিশ্বাসকে সম্মান জানিয়ে নিজেদের রীতি মেনে চলেন। যখন সারা দেশ হোলির আনন্দে মেতে উঠবে, তখন এই অঞ্চলগুলো নিজেদের ঐতিহ্যের ছায়ায় নীরবে দিন কাটাবে।
হোলির উৎসব যে শুধু রঙ আর আনন্দের প্রতীক নয়, তা এই গ্রামগুলির গল্প থেকেই স্পষ্ট হয়। ভারতের এই বৈচিত্র্যই দেশটির সংস্কৃতিকে আরও গভীর ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।