
চাঁদে অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে সেখানে বসবাসের সম্ভাবনা বিজ্ঞানীদের পূর্ব ধারণার চেয়েও সহজ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের পৃষ্ঠের ঠিক নীচে বরফের উপস্থিতি থাকতে পারে, এবং এর পরিমাণ বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হতে পারে। এই বরফ পানিতে রূপান্তর করা গেলে চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি মিশন এবং বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল *কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট*-এ। তবে, ব্রিটিশ দৈনিক *ইন্ডিপেনডেন্ট*-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাঁদের কতটুকু অংশে পানির উপস্থিতি থাকতে পারে, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, চাঁদের পৃষ্ঠে বরফের উপস্থিতি এর তাপমাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঐতিহাসিকভাবে, চাঁদের তাপমাত্রা পরিমাপের তথ্য প্রথম সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অ্যাপোলো মিশনের সময়। সে সময় মহাকাশযানটি চাঁদের বিষুবরেখার কাছাকাছি অবতরণ করেছিল, যা বর্তমানে বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করা দক্ষিণ মেরু অঞ্চল থেকে অনেক দূরে। গবেষকদের মতে, বিষুবরেখার কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে পৃষ্ঠের ঢাল তাপমাত্রার ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না।
নতুন তথ্য এসেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশনের ‘বিক্রম’ ল্যান্ডারে সংযুক্ত ‘চ্যাস্টে’ (ChaSTE) পরীক্ষার মাধ্যমে। ২০২৩ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের প্রান্তে অবতরণ করে এই ল্যান্ডার। ‘চ্যাস্টে’ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রার নতুন পরিমাপ করেছেন। এই অভিযানে চাঁদের ঢালু ও সমতল উভয় ধরনের অঞ্চল পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষকরা জানান, সূর্যের বিপরীত দিকে মুখ করা ঢালু অংশগুলো এতটাই ঠাণ্ডা হতে পারে যে, সেখানে বরফ জমে থাকা সম্ভব।
এই আবিষ্কার চাঁদে ভবিষ্যৎ মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নাসার আসন্ন আর্টেমিস মিশন, যার মাধ্যমে ফের নভোচারী চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, এই ধরনের অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করছে। গবেষকদের মতে, বরফের উপস্থিতি শুধু পানির উৎস হিসেবে কাজ করবে না, বরং জ্বালানি উৎপাদন এবং জীবন রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
গবেষণাটি চাঁদে বসবাসের সম্ভাবনাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা এখন এই বরফের পরিমাণ ও বিতরণ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপে মনোনিবেশ করছেন। এই আবিষ্কার চাঁদকে মানবজাতির ভবিষ্যৎ গন্তব্য হিসেবে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।