বিশেষ: শুটিং চলাকালীন পান স্বামীর মৃত্যুসংবাদ, তবুও কাজ চালিয়ে যান সুচিত্রা সেন

বাংলা সিনেমার মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। শুটিং ফ্লোরে তিনি ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব—অভিজাত, আত্মমগ্ন, কথাবার্তায় সংযত। ক্যামেরার সামনে শট দিয়ে তিনি হয়তো চুপচাপ বইয়ের পাতা ওল্টাতেন। অনেকের কাছে তার এই স্বভাব ছিল দাপটের প্রতীক, কারও কাছে দম্ভের আভাস। কিন্তু গসিপ ম্যাগাজিনের পাতায় যাই লেখা থাক, তার সহশিল্পীদের কথায় উঠে আসে এক ভিন্ন সুচিত্রা—যিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত পেশাদার এবং কাজের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী।

এমনই এক অসাধারণ পেশাদারিত্বের নজির দেখা গিয়েছিল ১৯৬৯ সালে, সুশীল মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘মেঘ কালো’ ছবির শুটিংয়ে। এই সময়টি সুচিত্রার জীবনে এসেছিল এক গভীর ব্যক্তিগত শোকের মুহূর্ত। শুটিং চলাকালীনই খবর আসে যে তার স্বামী দিবানাথ সেন প্রয়াত হয়েছেন। জানা যায়, জাহাজে ভ্রমণের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। যদিও সুচিত্রা ও দিবানাথের দাম্পত্য জীবন ততদিনে কার্যত আলাদা পথে চলছিল, তবুও এই সংবাদ তার কাছে ছিল গভীর আঘাত।

স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সুচিত্রা যেন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার মুখ থেকে কেবল বেরিয়েছিল, “আমার জীবনের একটা চাবি হারিয়ে গেল।” এই কথায় ফুটে উঠেছিল তার ভেতরের কষ্ট। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই গভীর শোকেও তিনি নিজেকে বিচলিত হতে দেননি। বুকের ভেতর কষ্ট চেপে রেখে তিনি ‘মেঘ কালো’র শুটিং সম্পূর্ণ করেছিলেন।

শুটিং সেটে উপস্থিত সহকর্মীরা সেদিন তার এই দৃঢ়তা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তারা দেখেছিলেন একজন মহানায়িকাকে, যিনি শোকের মাঝেও নিজের কাজের প্রতি অটল দায়বদ্ধতা দেখিয়েছেন। সুচিত্রার এই গুণই তাকে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা করে দিয়েছিল—দৃঢ়, নিয়ন্ত্রিত এবং শিল্পের প্রতি সম্পূর্ণ নিষ্ঠাবান।

আজও সেই ঘটনা ভোলেননি তার সহশিল্পীরা। ‘মেঘ কালো’র শুটিংয়ের সেই দিনটি সুচিত্রা সেনের জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে রয়ে গেছে। তার এই অসাধারণ মানসিক শক্তি ও পেশাদারিত্বই তাকে বাংলা সিনেমার মহানায়িকার আসনে চিরস্থায়ী করে রেখেছে।