
হিন্দু ধর্মীয় পর্বগুলির মধ্যে যশোদা জয়ন্তী একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। এই উৎসবটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পালিকা মাতা যশোদার জন্মবার্ষিকী হিসেবে পালিত হয়। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, যদিও শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর শৈশব কাটে যশোদার কোলে। এই দিনটি মাতা যশোদা ও শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র সম্পর্ককে স্মরণ করে, যা মাতা ও সন্তানের অম্লান প্রেমের প্রতীক।
যশোদা জয়ন্তী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে উপবাস রাখা এবং যথাযথ আচার-অনুষ্ঠান পালন করাকে অত্যন্ত পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে সঠিক নিয়মে পুজো করলে সন্তানসুখ লাভ হয় এবং সন্তানের মঙ্গল কামনা পূর্ণ হয়। বিশেষত মহিলাদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মাতৃস্নেহ ও ত্যাগের প্রতীক।
বৈদিক পঞ্জিকা অনুসারে, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে যশোদা জয়ন্তী পালিত হয়। এই বছর, ষষ্ঠী তিথি শুরু হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে ভোর ৪টা ৫৩ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে সকাল ৭টা ৩২ মিনিটে। এই হিসেবে, এই বছর যশোদা জয়ন্তী পালিত হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে।
যশোদা জয়ন্তীর দিন মহিলারা উপবাস রাখেন এবং মাতা যশোদা ও শিশু কৃষ্ণের যুগল মূর্তির পুজো করেন। এই পুজোয় মাতা যশোদার কোলে বসে থাকা শিশু কৃষ্ণের মূর্তি স্থাপন করা হয়, যা মাতা ও সন্তানের পবিত্র বন্ধনের প্রতীক। এই দিনে মহিলারা তাদের সন্তানের দীর্ঘায়ু, সুস্থতা ও সুখী জীবনের জন্য প্রার্থনা করেন। এছাড়াও, যারা সন্তান লাভের ইচ্ছা পোষণ করেন, তাদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত হয়।
যশোদা জয়ন্তী কেবল একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, এটি মাতৃপ্রেম ও ত্যাগের মহিমাকে স্মরণ করার একটি অনন্য উপলক্ষ। মাতা যশোদার প্রতি শ্রীকৃষ্ণের ভালোবাসা এবং যশোদার মমত্ববোধ আজও মানুষের হৃদয়ে অমলিন। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষ মাতৃত্বের পবিত্রতা ও মমতাকে শ্রদ্ধা জানায়।
২০২৫ সালের যশোদা জয়ন্তীতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত মাতা যশোদা ও শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ পেতে মন্দিরে ও ঘরে ঘরে পুজো-অর্চনা করবেন। এই দিনটি সকলের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক—এই কামনায় সকলকে জানাই যশোদা জয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
যশোদা জয়ন্তী শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, এটি মাতৃত্বের মহিমা ও সন্তানের প্রতি মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসার এক অপূর্ব উদযাপন। এই দিনটি সকলের জীবনে মঙ্গল বয়ে আনুক—এই প্রার্থনা রইল।