“বিধানসভা নির্বাচনে খেলা হবে”-ফুটবল টুর্নামেন্টে TMC নেতার মন্তব্যে ফের শোরগোল বাংলায়

আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। এবার সেই বিতর্ক আরও উসকে দিলেন মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি জিয়াউর রহমান। স্থানীয় একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে তিনি প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে বলেন, “আগামী বিধানসভা নির্বাচনে খেলা হবে। বন্ধু, ভাই, কর্মীরা তৈরি হও। সেখানে কোনও রেফারি থাকবে না, কোনও লাল কার্ড থাকবে না।” এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

ফুটবল প্রতিযোগিতার মঞ্চেই বিতর্কিত মন্তব্য
মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে ভিঙ্গল মাঠে একটি ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, “খেলার মাঠে যেমন বিরোধীরা আটকানোর জন্য পায়ে মারার চেষ্টা করে, তেমনই নির্বাচনের লড়াইয়েও আমাদের তৈরি থাকতে হবে। কিন্তু এখানে কোনও রেফারি থাকবে না, কোনও লাল কার্ড থাকবে না।”

এই বক্তব্যের পর থেকেই বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, এটি আসলে হুমকি এবং ভোটের আগে সন্ত্রাসের বার্তা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে তৃণমূল যে আক্রমণাত্মক নীতি নিচ্ছে, সেটাই প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলে মনে করছে বিরোধী শিবির।

বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা
এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে একযোগে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।

সিপিএমের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য জামিল ফিরদৌস বলেন, “তৃণমূল নেতারা বলছেন ‘খেলা হবে’, কিন্তু মানুষ জানে কিসের খেলা হবে। ২০২৬-এ ভোটের ময়দানে জনগণই দেখিয়ে দেবে প্রকৃত খেলা কাকে বলে। পুলিশ প্রশাসনকে ঢাল বানিয়ে যারা শাসন করছে, তাদের বিরুদ্ধে মানুষ রায় দেবে।”

কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আব্দুস শোভান বলেন, “মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো বিধানসভা নির্বাচনেও ওরা প্রশাসনের ওপর ভরসা করছে। পুলিশ প্রশাসন যদি সরে যায়, তবে তৃণমূল দুই মিনিটও টিকতে পারবে না।”

বিজেপির উত্তর মালদা সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত আরও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, “তৃণমূল নেতারা বলছেন রেফারি থাকবে না, লাল কার্ড থাকবে না। কারণ পুলিশ তো তাদের দলদাসে পরিণত হয়েছে। আমরা জানি ২০২৬-এর নির্বাচনে প্রকৃত খেলা হবে, আর সেই খেলা জনগণ খেলবে।”

তৃণমূলের পাল্টা সাফাই
তবে তৃণমূলের তরফে এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, ব্লক সভাপতির বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ‘খেলা হবে’ কথাটি প্রতীকী অর্থে বলা হয়েছে এবং রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রেক্ষিতেই এটি বলা হয়েছে।

রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক পরিবেশ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্লক সভাপতির মন্তব্য বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।

বিরোধীরা একদিকে তৃণমূলের হুমকির রাজনীতি নিয়ে সরব হলেও, তৃণমূল নেতৃত্ব নিজেদের বক্তব্যের সাফাই দিতে ব্যস্ত। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, এই বিতর্ক আরও দীর্ঘায়িত হবে এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠবে ‘খেলা হবে’ মন্তব্য।