কলকাতার ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল হেলে পড়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতা পুরসভা এই বহুতলটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। যদিও প্রাথমিকভাবে বাসিন্দাদের বাড়ি খালি করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তারা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন এবং উপযুক্ত বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
বহুতল ভাঙার নির্দেশ ও বিকল্প পুনর্বাসন:
স্থানীয় কাউন্সিলর সন্দীপন সাহা জানান, বহুতলটির বর্তমান অবস্থা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারদের রিপোর্টের উপর নির্ভরশীল। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, যদি রিপোর্টে বহুতলটিকে বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়, তাহলে তা ভেঙে ফেলা হবে। কাউন্সিলর আরও জানান, ভেঙে দেওয়া হলে সেখানে সরকারি প্রকল্প ‘বাংলার বাড়ি’র অধীনে নতুন আবাসন তৈরি করে বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া ও দাবি:
বহুতল ভাঙার নির্দেশে বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। তাদের দাবি, অন্য কোনো উপায়ে যদি বাড়িটি মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হোক। তারা অবিলম্বে বাড়ি না ভেঙে মেরামতের সম্ভাব্যতা যাচাই করার দাবি জানিয়েছেন।
প্রোমোটারের বিরুদ্ধে এফআইআর:
এই ঘটনায় ট্যাংরা থানায় প্রোমোটারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তবে বহুতলটি ঠিক কী কারণে হেলে পড়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নির্মাণের ত্রুটি, কোনো গাফিলতি নাকি অন্য কোনো প্রাকৃতিক কারণ—সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়:
কাউন্সিলর ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও, এই প্রকল্পে এত সংখ্যক পরিবারের স্থান সংকুলান সম্ভব কিনা, সেই বিষয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে কাউন্সিলর জানিয়েছেন, বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য প্রশ্ন:
বাড়ির মালিকদের দাবি, তাদের আবাসনের সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন সিসি (কমপ্লিশন সার্টিফিকেট) রয়েছে। কিন্তু নতুন করে বাড়ি তৈরি হলে সিসি ছাড়া জল ও বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়া যাবে না। এছাড়াও, বাড়ি ভাঙার পর কলকাতা পুরসভা বাসিন্দাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে কিনা, সে বিষয়েও কোনো স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়নি।
ট্যাংরার এই ঘটনা শহরের নির্মাণ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও নজরদারির অভাবকে আরও একবার প্রকট করে তুলেছে। এখন দেখার বিষয়, তদন্তের পর কী তথ্য উঠে আসে এবং পুরসভা বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের জন্য কী পদক্ষেপ নেয়।