স্টেশনে মেলে খোঁজ-দিন কাটতো হোমে, সেই সঙ্গীত পাড়ি দিল আমেরিকায়, পেল নতুন মা-বাবা

বিশেষভাবে সক্ষম এক শিশুকে জন্মের পরেই স্টেশনে ফেলে গিয়েছিলেন তার বাবা-মা। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সেই শিশুটিকে দত্তক নিলেন আমেরিকার এক দম্পতি। শিশুটি এত দিন মেদিনীপুরের একটি সরকারি হোমে বড় হচ্ছিল। নিউ জার্সি থেকে এসে এক দম্পতি সরকারি নিয়ম মেনে শিশুটিকে তাদের নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। গত কয়েক মাসে এই নিয়ে মেদিনীপুরের সরকারি হোমে পালিত হওয়া ৬ জন শিশু বিদেশে দত্তক হল।
খড়গপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বিশেষভাবে সক্ষম একটি শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বাবা-মায়ের খোঁজ করেও কোনো সন্ধান না পাওয়ায় তাকে মেদিনীপুর শহরের সরকারি হোমে আশ্রয় দেওয়া হয়। সেখানেই তার প্রতিপালন চলছিল। শিশুটির নাম দেওয়া হয়েছিল সঙ্গীত।
এই ধরনের শিশুদের দত্তক নেওয়ার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ আবেদন করেন। সম্প্রতি আমেরিকার নিউ জার্সি থেকে এক দম্পতি আন্তর্জাতিক দত্তক সংস্থার মাধ্যমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সেই আবেদন খতিয়ে দেখার পর নিউ জার্সির ওই দম্পতি হোমে থাকা বিশেষভাবে সক্ষম চার বছরের সঙ্গীত-এর সন্ধান পান। বিশেষভাবে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তারা শিশুটিকে দত্তক নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
আমেরিকার ওই দম্পতির মধ্যে স্বামী একটি কোম্পানির ফ্যাসিলিটেড ম্যানেজার এবং স্ত্রী গৃহবধূ। তাদের ইতিমধ্যে দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে, কিন্তু পরবর্তীতে আর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় তারা একটি পুত্রসন্তানের খোঁজ করছিলেন। এজন্য বিভিন্ন মাধ্যম ঘুরে তারা মেদিনীপুরের সরকারি হোমের বিশেষভাবে সক্ষম সঙ্গীত-এর সন্ধান পান।
সংবাদমাধ্যমের সামনে নিউ জার্সির ওই মহিলা বলেন, “আমার দুই মেয়ে রয়েছে। আমরা একটি পুত্রসন্তান চাইছিলাম। এই ছেলেটিকে আমার দুই মেয়ে খুব পছন্দ করেছে। তাদের ভাই হিসেবে এই ছেলেটিকে পেয়ে আমরা খুবই গর্বিত হব। নিজেদের ভাগ্যবান মনে করব। ছেলেটি প্রতিবন্ধী হলেও অনেক স্মার্ট। যেমন আছে তেমনটাই আমরা গ্রহণ করব ওকে।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক জানান, এই নিয়ে ৫৭ জন শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৬ জন বিদেশে গিয়েছে—ইতালি, বেলজিয়াম, জার্মানি, স্পেন এবং আমেরিকায়। হোমে আরও তিনটি শিশু রয়েছে যারা দত্তক পাওয়ার যোগ্য। তিনি আরও বলেন, “আমরা খুবই সফল। এই ধরনের বাচ্চারা তাদের যোগ্য বাবা-মা পাচ্ছে।”
সোমবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরে জেলা শাসকের দপ্তরে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সঙ্গীতকে দত্তক দেওয়া হয়। দত্তক দেওয়ার পর দম্পতি দিল্লিতে আরও কিছুদিন থাকবেন এবং শিশুর সঙ্গে সময় কাটাবেন, যাতে তার সঙ্গে তাদের মানসিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। তারপর তারা সঙ্গীতকে নিয়ে আমেরিকার নিউ জার্সিতে রওনা দেবেন।
মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে এমন আরও অনেক অনাথ এবং খুঁজে পাওয়া শিশুকে লালন-পালন করা হয় এবং বিভিন্ন নিঃসন্তান দম্পতিদের দত্তক দেওয়া হয়। প্রশাসন দত্তক দেওয়ার আগে ও পরে শিশুদের অবস্থার ওপর নজর রাখে।