আফগানিস্তানে ফের হামলা, ৭১ জন জঙ্গিকে হত্যা করলো পাকিস্তান

আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে একদিন আগেই ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে চালানো এই হামলায় ৭১ জনেরও বেশি জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত ওই জঙ্গিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডারও রয়েছেন। পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তান আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটির নিরাপত্তা সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই হামলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডারসহ ৭১ জনেরও বেশি খাওয়ারিজ জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে।

রাতের আঁধারে চালানো এই হামলায় খাওয়ারিজ জঙ্গিদের চারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আস্তানাও ধ্বংস করে দিয়েছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। ওই চারটি আস্তানার মধ্যে একটি সুইসাইড ভেস্ট তৈরি সংক্রান্ত অবকাঠামো এবং তাদের উমর মিডিয়া সেলও রয়েছে।

পাকিস্তানের একজন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন,“পাকিস্তান যে নিজেদের সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে, তা এবারই প্রথম নয়। এর আগে, পাকিস্তান ড্রোন হামলার মাধ্যমে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল, তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও করেছিল। সে সময় আফগান তালেবান আমাদের আশ্বস্ত করেছিল, আফগান মাটি থেকে পাকিস্তানে আর কোনও হামলা হবে না। দুর্ভাগ্যবশত তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি; তারা (তালোবান) দোহা চুক্তিসহ অন্যান্য চুক্তিও ভঙ্গ করতে পরিচিত।”

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “আফগান তালেবানরা যদি পাকিস্তান এবং চীনের সাথে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে এবং তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। এই হুমকি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান খাওয়ারিজ জঙ্গিদের অভয়ারণ্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাবে।”

পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্র বলছে, এই অভিযান পাকিস্তানের সমস্ত শত্রুদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে। যদিও আমরা আমাদের সৈন্যদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছি, তবে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। আমরা এই খাওয়ারিজদের শেষ ব্যক্তিকে না ধরা পর্যন্ত ধাওয়া করব, সেটা তারা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন।”

এদিকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্র বলেছে, পাকিস্তানের হামলার পর আফগান এবং ভারতীয় মিডিয়া ২০২৩ সালের আফগানিস্তান ভূমিকম্পে মারা যাওয়া শিশুদের ছবি ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তারা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হামলায় হতাহতের ঘটনাকে মিথ্যাভাবে চিত্রিত করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার আগেও কখনও কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও কাজ করবে না।

নিরাপত্তা সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলার মাধ্যমে আফগানিস্তানে ফিতনা আল-খাওয়ারিজের চারটি প্রধান কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শের জামান ওরফে মুখলিশ ইয়ার, আখতার মুহাম্মদ ওরফে খলিল, ইজহার ওরফে হামজা ও শোয়েব চিমা।

এই কেন্দ্রগুলো শুধুমাত্র এই খাওয়ারিজিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবেই কাজ করেনি বরং তাদের প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্যও এগুলো ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy