বিশেষ: মাছের কামড় খেলেই সারবে কঠিন রোগ, জেনেনিন নতুন এক চিকিৎসা সম্পর্কে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য নানান ধরনের স্পার ব্যবস্থা আছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে থ্যাইল্যান্ড এদিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে। সেখানকার স্পা গুলোতে হাত-পা এবং শরীরের নানান ধরনের স্পা রয়েছে। যা শরীরের ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি নানান ব্যথা সারাতেও খুব কাজে দেয়।

বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই ফিস স্পার চল শুরু হয়েছে। হাউজ ভর্তি ছোট ছোট মাছ, তার মধ্যে পা ডুবিয়ে বসে থাকা। ভারতের দক্ষিণী সিনেমা বাহুবলির একটি দৃশ্য মনে আছে নিশ্চয়ই, যেখানে ক্লান্ত নায়িকা লেকের জলে হাত ডুবিয়ে দেয় আর ছোট ছোট মাছেরা হাতে কামড়াতে থাকে। আরামে নায়িকা কিছুক্ষণ ঘুমিয়েও নেন।

ঠিক সেরকমই। এটি হয়ে উঠেছে এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পা। গারা রুফা নামের একটি ছোট্ট কার্পজাতীয় (সাইপ্রিনিড) মাছ। যে মাছগুলোকে বলা হয় ডাক্তার মাছ। এর পেছনে এক কাহিনি আছে, শোনা যায়, মধ্য তুরস্কের সিবাস প্রদেশের হট স্প্রিংয়েই এই মাছের বাস। কথিত ৪০০ বছর আগে এই হট স্প্রিংয়ে পড়ে গিয়েছিলেন এক ক্লান্ত মেষপালক। হাজারটা ছোট ছোট মাছ তাকে ছেঁকে ধরেছিল। এতেই সেরে যায় তার সব ক্ষত। সেই থেকেই এই মাছের নাম হয়ে যায় ‘ডাক্তার মাছ’। একজিমা থেকে অবসাদ, সবই নাকি সারিয়ে তুলতে পারে এই মাছ।

এটি সাধারণত মৃদু স্বাদু জলে বসবাস করে। এই মাছের প্রজাতিটি প্রধানত সেন্ট্রাল ইউরেশিয়া অঞ্চলে দেখা যায়। এই মাছটি সারা বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে ডক্টর ফিস বা ডাক্তার মাছ নামে পরিচিত। তবে অনেক সময় এই মাছটিকে নিবল ফিশও বলা হয়। এক দশক সময়েরও কিছু আগে থেকে এই মাছটি তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ত্বকের বিভিন্ন রোগ যেমন সোরিয়াসিস, একজিমা ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে এই পদ্ধতিটি দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এমনকি বাংলাদেশ ও এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি বিদ্যমান।

ছোট্ট প্রজাতির মাছটি মানুষের পায়ে থাকা ডেড স্কিন বা মৃত চামড়া খেয়ে ফেলে। ফলে পায়ের যত্নে সারা বিশ্বব্যাপী এই মাছের মাধ্যমে পেডিকিউর করা হয়ে থাকে। মৃত চামড়া খেয়ে ফেলার মাধ্যমে পায়ে নতুন চামড়া দৃশ্যমান হয় এজন্য পা আরো বেশি সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এই মাছটি ছোট্ট একটি ট্যাংক বা বাথ টবের মধ্যে রেখে দিয়ে এর মধ্যে পা ডুবিয়ে বসিয়ে রাখা হয় রোগীকে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর পায়ে থাকা ডেড স্কিনগুলোকে খেয়ে ফেলে। এভাবেই সম্পূর্ণ হয় এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি। তাছাড়া অনেক সময় মুখে কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মৃত ত্বক দূর করতে এই মাছের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়।

যদিও বর্তমানে এই পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়। তবে এর রয়েছে বেশ কিছু ঝুঁকি। এমনকি এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সংক্রামক রোগে সংক্রমিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এজন্য মার্কিন যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইউরোপের কিছু অংশে এ মাছের মাধ্যমে ত্বকের চিকিৎসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে এই মাছের মাধ্যমে পেডিকিউর করালে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। এ ধরনের কয়েকটি গবেষণার ফলাফল নিম্নে তুলে ধরা হলো-

স্প্রিঞ্জার এর ‘ইনফেকশন’ নামক জার্নালে ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, গারা রুফা মাছের মাধ্যমে ফিস পেডিকিউর করার পর স্টাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটেছে।

এছাড়া ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ডার্মাটোলজিতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে এই মাছ দিয়ে পেডিকিউর করার ফলে মাইকোব্যাকটেরিয়াম মেরিনাম নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে মাইকোব্যাকটেরিয়োসিস নামক সংক্রামক রোগ সৃষ্টি হয়েছে।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এই পদ্ধতিতে আমাদের দেহের মৃত চামড়া দূর করা আসলে বিজ্ঞানসম্মত নয়। তাছাড়া এটি কোনো গবেষণালব্ধ পদ্ধতি নয়। আমাদের উচিত ডক্টর ফিসের মাধ্যমে পেডিকিউর কিংবা ম্যানিকিউর করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা।

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy