বিশেষ: কলাটি বিক্রি হলো আকাশছোঁয়া মূল্যে, কি কারণে মিললো এতো দাম?

প্রখ্যাত ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলান ২০১৯ সালে শিল্পাঙ্গনে একটি কলা নিয়ে এসে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন, এবার তার সেই ‘কলা শিল্প’ বিক্রি হলো আকাশছোঁয়া মূল্যে।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ জানেন কত? আর দাম শুনলে মাথা না ঘুরে যায়; তাই আগে শক্ত হয়ে বসুন এবং দাম শুনুন।

শিল্প হলেও তা আসলে একটি কলাই তো, হ্যাঁ! যে কলা আমরা খেয়ে থাকি। কিন্তু তাই বলে একটি কলা ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হবে? অথচ হয়েছে তাই।

স্থানীয় সময় বুধবার (২০ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সদেবিজের নিলামে কলার ওই শিল্পকর্মটি বিক্রি হয়েছে ৬.২ মিলিয়ন ডলারে, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। নিলাম শুরু হওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে ৬ প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে সেটি কিনে নেন চীনা বংশোদ্ভূত ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা জাস্টিন সান।

এই শিল্পকর্মটি মূলত ২০১৯ সালের কনসেপ্ট আর্টওয়ার্ক। ‘কমেডিয়ান’ নামের এই শিল্পের স্রষ্টা মরিজিও ক্যাটেলান।

এটি মূলত টেপ দিয়ে দেয়ালে আটকে রাখা একটি কলা, শিল্পীর নির্দেশনা অনুযায়ী যা প্রতিস্থাপনযোগ্য।

সে বছর আর্ট বাসেল মায়ামি বিচ প্রদর্শনীতে প্রথম ‘কমেডিয়ান’ এর প্রদর্শনী হয়। এরপর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসেন ক্যাটেলান ও তার এই শিল্পকর্ম।

শিল্পপ্রেমীদের কাছে শিল্পের চিরাচরিত মাপকাঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় ‘কমেডিয়ান’। আর এর পক্ষে-বিপক্ষে ওঠে আলোচনার ঝড়। প্রথম কলাটি শত শত দর্শকের সামনে দেয়াল থেকে তুলে খেয়ে ফেলেন পারফরম্যান্স আর্টিস্ট ডেভিড ডাটুনা। এরপর তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।

ডাটুনা অবশ্য পরে দাবি করেন, কলা খাওয়ার কাজটি তার নিজস্ব আর্টিস্টিক পারফরম্যান্স ছিল। কোনো ধরনের উগ্রতা প্রদর্শনের ইচ্ছায় তিনি কাজটি করেননি।

পরে ফের আরেকটি কলা সেখানে সাঁটানো হলে সেটি দেখতে এত লোকের ভিড় হয় যে একপর্যায়ে মায়ামির প্রদর্শনী থেকে ‘কমেডিয়ান’ সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে তার আগেই সেখানে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ ডলারের মধ্যে এর ৩টি সংস্করণ বিক্রি হয়।

৫ বছর পর ফের ‘কমেডিয়ান’কে সামনে নিয়ে আসেন শিল্পী ক্যাটেলান। এবার ধারণা করা হয়েছিল, শিল্পকর্মটির দাম অন্তত এক-দেড় লাখ ডলার উঠবে। কিন্তু নিলাম সঞ্চালকের চক্ষু ছানাবড়া করে দিয়ে তা বিক্রি হয় ৬.২ মিলিয়ন ডলারে।

এদিন ৮ লাখ ডলার থেকে নিলাম শুরু হয়। এক মিনিটের মধ্যেই তা ২ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়, এরপর ৩, তারপর ৪ মিলিয়ন। নিলাম সঞ্চালক অলিভার বার্কার এ সময় মজা করে বলেন, ‘কোনোভাবেই যেন ছুটে না যায়! এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না’। এরপর হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘এও বলতে হবে, এমনটি কখনো ভাবিনি আমি। একটি কলার জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার’!

তবে শেষমেষ ৫.২ মিলিয়ন ডলারে কলাটি কিনে নেন জাস্টিন সান। আর নিলামঘরের ১ মিলিয়ন ফিসহ তাকে পরিশোধ করতে হয়েছে মোট ৬.২ মিলিয়ন ডলার।

নিজের অনভূতি জানাতে গিয়ে সান বলেন, ‘এটি আসলে এমন একটি সাংস্কৃতিক ঘটনাকে উপস্থাপন করে যা শিল্প, মিম ও ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে’।

কলাটি যে বেশিদিন টিকবে না, সে কথাও স্বীকার করে হাসিমুখে তিনি বলেন, ‘অনন্য এক শৈল্পিক অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে কলাটি আমি খেয়ে ফেলব। এর মাধ্যমে শিল্পের ইতিহাস ও জনপ্রিয় সংস্কৃতি উভয় ক্ষেত্রেই আমি এটিকে সম্মানের আসনে বসাব’।

উল্লেখ্য, শিল্পকর্ম ও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকেন জাস্টিন সান। আলবার্তো জিয়াকমেত্তির ১৯৪৭ সালের একটি ভাস্কর্য তার সংগ্রহে রয়েছে। ২০২১ সালে ৭৮.৪ মিলিয়ন ডলারে তিনি ভাস্কর্যটি কেনেন।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy