মিশরের এক অত্যাচারী রাজা ছিলেন ফেরাউন। এই ফেরাউনের মৃত্যুর হাজার হাজার বছর হলেও তার দেহ এখনো অক্ষত আছে। পৃথিবীতে রহস্য নিয়ে মানুষের কৌতূহলের কমতি নেই। এই রহস্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে মিশরের শাসক ফেরাউন কিংবা ফারাওদের নাম। ইসলাম ধর্মে ফেরাউনের নাম শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। এই ফেরাউনের রহস্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত, কেন পচে না এর লাশ?
প্রাচীন মিশরীয় সম্রাটদের বলা হতো ফেরাউন বা ফারাও। বলা হয়ে থাকে, ফেরাউন নির্দিষ্ট কারো নাম না, বরং এটি একটি উপাধি। ধারণা করা হয়, প্রায় ৩৩০০ বছর আগে প্রাচীন মিশরে এক ফেরাউনের রাজত্ব ছিল যার নাম- ২য় রামাসিস। এই রামাসিসকেই মূলত সবাই ফেরাউন হিসেবে চিনে থাকি।
আল্লাহ এই রামাসিস খ্যাত ফেরাউনকে ক্ষমতা, আধিপত্য, সম্পদের কোনো কিছু থেকেই কমতি রাখেননি। কিন্তু ফেরাউন অতিরিক্ত এই ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু তো করলই, সঙ্গে করে বসল এক বিরাট বড় ভুল। আল্লাহ এক অস্বীকার তো করলই সঙ্গে নিজেকেই নিজে দাবি করে বসল স্বয়ং খোদা হিসেবে।
এক গণক ফেরাউনকে বলেছিলেন, বনী ইসরাইলে এক বালক জন্ম নেবে যে পরবর্তীতে ফেরাউনকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। এরপরই ফেরাউন ক্ষিপ্ত হয়ে বনী ইসরাইলে জন্ম নেয়া সব ছেলে শিশুকে হত্যা করতে শুরু করল। কিন্তু আল্লাহর হুকুমেই সে মুসা (আ.) কে হত্যা করতে পারল না। শুধু তাই নয়, মুসা বড় হয়েছিলেন স্বয়ং ফেরাউনেরই ঘরে।
এরপরের ঘটনাটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই বেশ পরিচিত। মুসা (আ.) ভুলবশত একজনকে হত্যা করলে তিনি একসময় মিশর থেকে পালিয়ে যান এবং নবুওয়াত প্রাপ্তির পর আবার মিশরে ফিরে এসে ফেরাউনকে হেদায়াতের কথা বললে তাকেসহ তার সাথীদের হত্যার চেষ্টা করে ফেরাউন।
এরপরই ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা। মুসার সামনে থাকা উত্তাল সাগর দুই ভাগ হয়ে যায়। তিনি এবং তার সাথীরা সেখান থেকে বেশ সহজেই পার হতে পারলেও ফেরাউন সাগরের গভীর জলে তলিয়ে যায় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
তবে আল্লাহ তাকে পুরোপুরি ধ্বংস করলেন না। তার দেহাবশেষ হাজার হাজার বছর জলের নিচে এভাবেই রেখে দিলেন। জানা যায়, ১৮৮১ সালে খুঁজে পাওয়া যায় ফেরাউনের লাশ এবং অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করা হয়, এই লাশে এখনো কোনো পচন ধরেনি। পরবর্তীতে ফেরাউনের লাশ রাখা হয় মিশরের এক জাদুঘরে।
এর বেশ কিছুকাল পর ফ্রান্সের সরকার কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য তৎকালীন মিশর সরকারের কাছে ফেরাউনের লাশ চাইলে মিশরের সরকার জানায়, ফ্রান্সে জীবিত কিংবা মৃত কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তার পাসপোর্ট থাকা লাগবে। এরপরই তৈরি করা হয় ফেরাউনের পাসপোর্ট।
ফেরাউনের এই গবেষণার কাজে এক গবেষক নিয়োজিত ছিলেন, যার নাম প্রফেসর মরিস বুকাইলি। তিনি দেখতে পান, ফেরাউনের গায়ে লেগে ছিল অনেক পরিমাণে লবণ। সে লবণের কারণেই তিনি ধারণা করলেন তার লাশ না পচার কারণ হিসেবে। কেননা, সাগরে ডুবে মৃত্যু না হলে এত লবণ আসার কোনো উপায় ছিল না। এছাড়া তিনি ফেরাউনের শরীরে চোটের চিহ্ন দেখতে পান, যা কেবল সাগরের ঢেউয়েই হয়ে থাকে।
বুকাইলিকে একজন জানান, কোরআনে বলা হয়েছে এক ফেরাউনকে এভাবেই শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু বুকাইলি অবাক হন এই ভেবে যে, কোরআন নাজিল হয় প্রায় কয়েক হাজার বছর পূর্বে, কিন্তু ফেরাউনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ১৮৮১ সালে।
বুকাইলি তখন আরও কিছু জানার জন্য গবেষণা করলে সেখানে দেখতে পান, সেখানে কেবল ফেরাউনের ডুবে যাওয়া নিয়েই সব তথ্য দেওয়া, কোনো লাশ সংগ্রহ নিয়ে তথ্য নেই। তখন তিনি কোরআনের একটি আয়াত দেখলেন যেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ এই ফেরাউনকে নিয়ে বলেন, তিনি ফেরাউনের দেহকে রক্ষা করবেন, যাতে তার এই শরীর পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে।
এতে করে বোঝা যায়, ফেরাউনকে মহান আল্লাহ এক নিদর্শন হিসেবেই রেখে দিতে চেয়েছেন।