বিশেষ: স্কুলে ফোন বিরতি না কি ব্যান, ক্লাসে মনোযোগের জন্য কোনটি ভালো?

অস্ট্রেলিয়ায় যখন বিতর্ক চলছে ক্লাসে সবচেয়ে ভাল উপায়ে কীভাবে ফোনের ব্যবহার করা যায়, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করা নতুন এক গবেষণা বলছে, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়াতে এক মিনিটের ফোন বিরতিও কাজে আসে।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফ্রন্টিয়ার’-এ, যেখানে প্রথমবারের মতো নজর দেওয়া হয়েছে কলেজের পরিবেশে প্রযুক্তি কেমন প্রভাব ফেলে তার উপর। এখানে ‘কলেজ’ মানে হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিকের পরে, স্নাতক পর্যায়ের ক্লাস, যেখানে সাধারণত ১৮-২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করেন।

“গবেষণায় আমরা দেখেছি, ক্লাসে ফোনের ব্যবহার কমাতে সহায়ক হতে পারে প্রযুক্তি বিরতি,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক রায়ান রেডনার।

কলেজের একটি কোর্স চলাকালীন ১৫ মিনিটের বক্তৃতায় শিক্ষার্থীদের এক, দুই বা চার মিনিটের প্রযুক্তি বিরতি দেন গবেষকরা। এ প্রযুক্তি বিরতির সময় একেবারেই ফোন ব্যবহার করতে পারেননি শিক্ষার্থীরা।

গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলে দেখা মিলেছে, প্রযুক্তি বিরতি দিলে ক্লাসে এ শিক্ষার্থীদের ফোন ব্যবহারের প্রবণতা কম থাকে। এমনকি ২ বা ৪ মিনিটের প্রযুক্তি বিরতির তুলনায় এক মিনিটের প্রযুক্তি বিরতির সময়ও ফোনের ব্যবহার সবচেয়ে কম ছিল তাদের।

“এর একটি সম্ভাবনা হতে পারে, একদুটি মেসেজ পড়া ও পাঠানোর জন্য এক মিনিটই যথেষ্ট। কিন্তু তাদেরকে আরও সময় দিলে ক্লাসের সময়ও মেসেজ পাওয়া ও এর উত্তর পাঠানোর প্রবণতা বেশি থাকে শিক্ষার্থীদের,” বলেছেন রেডনার।

গবেষণায় পর্যবেক্ষণে ছিল ২২টি ক্লাস পিরিয়ড, যার প্রতিটিতে গড়ে ২১ জন শিক্ষার্থী ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস।

শিক্ষার্থীরা কতটা মনোযোগ দিচ্ছে তা পরীক্ষা করার জন্য প্রতিটি ক্লাসের পর তাদের সংক্ষিপ্ত কুইজও দেন গবেষকরা। প্রযুক্তি বিরতি নেই এমন শিক্ষার্থীদের তুলনায় যাদের প্রযুক্তি বিরতি ছিল তাদের ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার গড় ছিল কিছুটা বেশি। তবে পরিসংখ্যানগতভাবে বিস্ময়কর নয় এই ডেটা বা তথ্য।

“এর মানে হচ্ছে, ক্লাসে শিক্ষকের লেকচারের সময় মনোযোগ কম নষ্ট হয়েছে শিক্ষার্থীদের, যা তাদের নিয়ে গেছে আরও ভাল মনোযোগের দিকে,” বলেছেন রেডনার।

“আমরা ফোনের ব্যবহার কমিয়ে আনার বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি এবং কোনওরকম সাজা ছাড়াই আমরা এটি করছি,” বলেছেন রেডনার।

গবেষণা দলের অংশ ছিলেন ‘কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি’র ‘স্কুল অফ এডুকেশন’ এর সহযোগী অধ্যাপক এলিজাবেথ এডওয়ার্ডস। এ বছরের শুরুর দিকে ফোন নিষিদ্ধ করার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রমাণ খতিয়ে দেখেন তিনি।

“স্কুলে ফোন নিষিদ্ধের বিষয়ে আমাদের এ গবেষণার পর্যালোচনায় উঠে এসেছে মিশ্র ফলাফল।”

“ফোনের কারণে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারে না শিক্ষার্থীরা – এমন দাবির বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তবে এ দাবি আসলে কতটা সত্যি তা প্রমাণের জন্য কঠোর পরীক্ষামূলক গবেষণার অভাব রয়েছে।”

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy