মন্দা কাটিয়ে পণ্যের স্টক পুনঃস্থাপনের কারণে আবারো প্রবৃদ্ধি দেখছে গেমিং পিসির বাজার। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিশ্বজুড়ে গেমিং পিসি বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ইউনিট, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি বাজার গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশলান ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) এ তথ্য জানিয়েছে। ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর এটি প্রথম গেমিং পিসি বিক্রির ইতিবাচক প্রতিবেদন। তাই প্রবৃদ্ধি খুব সামান্য হলেও এ বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টরা।
আইডিসির বিশ্বব্যাপী ত্রৈমাসিক গেমিং ট্র্যাকারের তথ্যানুযায়ী, গেমিং পিসির এ প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে টানা পাঁচ প্রান্তিক ধরে বৃদ্ধি পাওয়া গেমিং মনিটরের বাজার। ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসব মনিটরের বিক্রি পৌঁছেছে ৬৫ লাখ ইউনিটে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। আইডিসি ২০১৬ সালে ট্র্যাকিং শুরু করার পর এটিই সর্বাধিক গেমিং মনিটর বিক্রির সংখ্যা। এ সাফল্যের অন্যতম কারণ কোম্পানিগুলোর প্রচার কৌশল ও নতুন বিক্রেতা। উল্লেখ্য, প্রায় ৯০টি দেশের বাজারের তথ্য নিয়ে আইডিসি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
এদিকে সম্প্রতি দ্য ন্যাশনাল নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ভিডিও গেম খাতের আয় ২৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছার পূর্বাভাস দিয়েছেন গবেষকরা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। বেইন অ্যান্ড কোম্পানির গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছর বিশ্বে ভিডিও গেমের বাজার ১৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা স্ট্রিমিং সেবা ও বক্স অফিসের সম্মিলিত আয়কেও ছাড়িয়ে গেছে। মূলত ক্রেতা ও গেমিং বাজারের অব্যাহত সম্প্রসারণ ও প্রতিযোগিতা দ্বিতীয় প্রান্তিকে পিসি মনিটরের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মোট মনিটর বিক্রির ২০ শতাংশ দখল করেছে গেমিং মনিটরের বাজার। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গেমিং মনিটরের দাম কমে যাওয়া ও গেমিং পিসির বিক্রি ধীর হয়ে আসার কারণে গেমাররা তাদের মনিটর আপগ্রেড করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
এদিকে আইডিসির গবেষণা ব্যবস্থাপক জিতেশ বলছেন, ‘গেমিং পিসির বাজারে ধীরগতির কারণ শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়। নতুন আকর্ষণীয় হার্ডওয়্যারের অভাব ও অন্যান্য বিকল্পে বেশি বিনিয়োগ করার কারণেও এটি ঘটছে। আগামী কয়েক মাসে বাজার উন্নতি করলেও ২০২১ সালের তুলনায় গেমিং পিসির বিক্রি বেশি হবে না।’
সংস্থাটির আরেক কর্মকর্তা জে চৌ বলছেন, ‘গেমিং মনিটরগুলো এখন সার্বিক মনিটর বাজারের ২০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করছে। মনিটের মূল্য কমে আসা ও গেমিং পিসির বাজারে ধীরগতির কারণে ক্রেতাদের অগ্রাধিকার বদলেছে। গেমিং পিসির জন্য যে বাজেট ছিল, তার কিছু এখন মনিটরের জন্য ব্যয় হচ্ছে।’
আইডিসি ২০২৪ সালে পিসি ও মনিটরের জন্য গেমিং খাতের পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালে গেমিং ইউনিট বিক্রি হবে প্রায় সাত কোটি। অর্থাৎ গেমিংয়ের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস, যেমন গেমিং পিসি, ল্যাপটপ ও কনসোলের বিক্রি বাড়বে। সেই সঙ্গে ২০২৫ সালে নতুন গ্রাফিকস কার্ড বাজারে এলে উচ্চমানের গেমিং ডেস্কটপ ফিরে আসবে। পিসি ব্যবহারকারীরা উইন্ডোজ ইলেভেন পিসিতে স্থানান্তর হলে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে মনিটরের বিক্রি আরো বাড়বে বলে ধারণা করছেন প্রযুক্তিবিদরা।
গেমিং মনিটরকে ১৪৪ হার্টজের ন্যূনতম রিফ্রেশ রেট যুক্ত মনিটর হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় আর গেমিং পিসি হলো আরটিএক্স ৪০৫০-এর মতো জিপিইউ যুক্ত পিসি।