দিলীপ কুমার, রাজেশ খান্না থেকে বিরাট কোহলি—নাসিরুদ্দিন কাউকেই ছাড় দেননি

অভিনেতা হিসেবে তাঁকে সমীহ করেন তাঁর ঘোর বিরোধীও। পাঁচ দশকের হিন্দি ছবির ক্যারিয়ার দিয়ে এই সমীহ আদায় করে নিয়েছেন তিনি। ‘নিশান’, ‘আক্রোশ’, ‘স্পর্শ’, ‘মির্চ মাসালা’, ‘জুনুন’, ‘মান্ডি’ থেকে ‘অর্থ সত্য’—তাঁর কথা উঠলেই একের পর এক বলে দেওয়া যায় সিনেমাগুলোর নাম। এমনকি চলতি বছর মুক্তি পাওয়া ‘গেহরাইয়া’তে ছোট্ট একটা চরিত্রেও নিজের জাত চিনিয়েছেন। তিনি আর কেউ নন, হিন্দি সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম সেরা অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহ।

অভিনেতা হিসেবে যতটা আলোচিত, নিজের মন্তব্যের জন্য ততটাই বিতর্কিত তিনি। সিনেমা থেকে শুরু করে ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক নানা ইস্যুতে বরাবরই সরব। প্রশ্ন করা হলে লুকোছাপা না করে অকপট বলে দেন নিজের ভাবনা। ২০ জুলাই ছিল এই শক্তিমান অভিনেতার ৭২তম জন্মদিন। নাসিরউদ্দিন শাহর জন্মদিন উপলক্ষে নানা বিষয়ে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিন্দুস্থান টাইমস।

অনুপম খের একটা ভাঁড়
২০২০ সালে অনুপম খেরকে নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কের ঝড় তোলেন নাসিরউদ্দিন শাহ। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে সমর্থনের জন্য অনুপমকে ‘চাটুকার’ বলে অভিহিত করেন। দ্য ওয়্যারকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘অনুপমের মতো একজন, যে কিনা খুবই সরব (সরকারের সমর্থনে), তাকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। সে একটা ভাঁড়।’ মন্তব্যের পাল্টা দিতে গিয়ে অনুপম বলেন, হতাশা থেকেই নাসিরউদ্দিন এসব বলেছেন। এটাকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।

দিলীপ কুমারের তেমন কোনো অবদান নেই
নাসিরউদ্দিনের বাক্যবাণ থেকে রেহাই পাননি হিন্দি সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারও। গত বছর অভিনেতার মৃত্যুর পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে লেখা এক কলামে নাসিরউদ্দন লিখেছেন, ‘নিশ্চিতভাবেই তাঁর কিছু কাজ বেঁচে থাকবে। কিন্তু অভিনয়ের বাইরে তিনি সিনেমার জন্য বেশি কিছু করেননি। তিনি মাত্র একটা সিনেমা প্রযোজনা করেছেন, অফিশিয়ালি একটি ছবিও পরিচালনা করেননি। নতুন কাউকে তুলে আনার চেষ্টা করেননি, ভবিষ্যৎ অভিনেতাদের জন্য শিক্ষণীয় কিছু রেখে যাননি।’ তবে ওই লেখায় নিজেকে দিলীপ কুমারের বড় ভক্ত বলেও অভিহিত করেন নাসির।

রাজেশ খান্না একজন দুর্বল অভিনেতা

২০১৬ সালে হিন্দুস্থান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজেশ খান্নাকে ধুয়ে দেন নাসিরউদ্দিন শাহ। তিনি বলেন, ‘১৯৭০ দশকে হিন্দি ছবিতে মাঝারি মানের অভিনেতাদের আসা শুরু হয়। তখন রাজেশ খান্নার মতো অভিনেতাদের আগমন ঘটে। অনেক সাফল্য থাকা সত্ত্বেও বলতে হয়, অভিনেতা হিসেবে তাঁর দক্ষতা খুবই সীমিত। তিনি আসলে অভিনেতা হিসেবে দুর্বল।’ এই মন্তব্যের ব্যাপক সমালোচনার মুখে নাসির বলেন, রাজেশ খান্না যে এত জনপ্রিয়, সেটা তাঁর আগেই বোঝা উচিত ছিল। তবে নিজের আগের মন্তব্য সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানান নাসির।

বাদ যাননি কোহলিও
কেবল সিনেমা নয়, নাসিরউদ্দিন প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে পিছপা হননি। ২০১৮ সালে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বিরাট কেবল দুনিয়ার সেরা ব্যাটারই নয়, দুনিয়ার সবচেয়ে বাজে আচরণ করা খেলোয়াড়ও। তার বাজে আচরণ ও ঔদ্ধত্যের কাছে ক্রিকেটীয় দক্ষতা মলিন হয়ে যায়।’

প্রোপাগান্ডা ছবি
কেবল অভিনয়শিল্পীরা নন, নাসিরউদ্দিনের সমালোচনার শিকার হয়েছেন নির্মাতারাও। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এনডিটিভিকে তিনি বলেন, সরকারের প্রোপাগান্ডাধর্মী সিনেমা বানানোর জন্য নির্মাতাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। অনেক নির্মাতাকে সরকার নিজের মতের পক্ষে সিনেমা নির্মাণের জন্য অর্থসহায়তার অভিযোগও করেন তিনি।

Related Posts

© 2025 News - WordPress Theme by WPEnjoy