ভয়াবহ দাবানল: ভয়ংকর হয়ে উঠছে ইউরোপের গ্রীষ্ম

ইউরোপে ধীরে ধীরে নিয়মিত হয়ে উঠছে তীব্র দাবদাহ। চলতি সপ্তাহে এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল এবং যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে রেকর্ড সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পূর্বাভাসের পর বিষয়টি আবারও উঠে এসেছে আলোচনায়। গত দুই দশকের মধ্যে অন্তত পাঁচবার ১৫শ শতাব্দীর পর থেকে সর্বোচ্চ উষ্ণতম গ্রীষ্ম দেখেছে ইউরোপ।

২০২২: জোড়া বিপদ
পশ্চিম ইউরোপে তাণ্ডব চালাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। মাত্র এক মাসের মধ্যে দুবার এমন প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছে অঞ্চলটি। ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে ভাঙতে বসেছে তাপমাত্রার সর্বকালের রেকর্ড।

ফ্রান্স, গ্রিস, পর্তুগাল ও স্পেনে আগুনের কারণে হাজার হাজার বাসিন্দা এবং পর্যটক পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন।

নিজেদের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা তারচেয়েও বেশি তাপমাত্রার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে যুক্তরাজ্য। ফ্রান্সের ব্রিটানিতেও অনুরূপ তাপমাত্রা দেখা যেতে পারে, যা হবে তাদের আঞ্চলিক রেকর্ড।

২০২১: সর্বকালের রেকর্ড
ইউরোপীয় জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষক কোপার্নিকাসের হিসাবে, গত বছর নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রীষ্ম দেখেছে ইউরোপ।

২০২১ সালের জুলাইয়ের শেষ থেকে আগস্টের প্রথম দিকে গ্রিসে যে আবহাওয়া ছিল, সেটিকে গত ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে ভয়াবহ দাবদাহ বলে উল্লেখ করেছেন গ্রিক প্রধানমন্ত্রী। সেসময় তাদের কিছু অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল।

স্পেনের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা বলছে, ওই সময় দেশটির দক্ষিণের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।

তীব্র তাপ ও খরায় ভূমধ্যসাগর বরাবর তুরস্ক-গ্রিস থেকে ইতালি-স্পেন পর্যন্ত বিশাল দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল।

২০১৯: বিপদে উত্তর ইউরোপ
বেলজিয়ামের লুভেন ইউনিভার্সিটির বিপর্যয় গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালের গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে দুটি দাবদাহ দেখা দিয়েছিল, যাতে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ মারা যায়।

ওই বছরের ২৮ জুন ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ভেরার্গেসে তাপমাত্রা রেকর্ড ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। প্রাণ বাঁচাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় হাজার হাজার স্কুল।

২৪ ও ২৫ জুলাই রেকর্ড তাপমাত্রায় দগ্ধ হয় উত্তর ইউরোপ। উত্তর-পশ্চিম জার্মানির লিংজেনে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি, উত্তর বেলজিয়ামের বেগিজেনডিজকে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও পূর্ব ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

২০১৮: খরায় শুকায় দানিউব নদী
জুলাইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে ও আগস্টের শুরুতে ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে মারাত্মক দাবদাহ দেখা দেয় এবং তার জেরে সৃষ্ট খরায় নদীগুলো শুকিয়ে যায়।

দানিউবের কিছু অংশের জল ১০০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে যায়। এতে সার্বিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নদীতে নিমজ্জিত থাকা ট্যাংকগুলো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

পর্তুগাল ও স্পেনে দেখা দেয় ধ্বংসাত্মক দাবানল।

২০১৭: উত্তপ্ত কয়েক মাস
ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ, বিশেষ করে দক্ষিণে জুনের শেষ থেকে আগস্ট পর্যন্ত তীব্র দাবদাহ দেখা দিয়েছিল। ১৩ জুলাই স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মন্টোরোতে তাপমাত্রা ৪৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

দীর্ঘস্থায়ী খরায় দাবানল শুরু হয় পর্তুগালে।

২০১৫: একের পর এক তাপদাহ
এ বছর ইউরোপে একের পর এক দাবদাহ দেখা দেয়। এতে ফ্রান্সে আনুমানিক ১ হাজার ৭০০ জন প্রাণ হারান।

যুক্তরাজ্যে ইতিহাসের উষ্ণতম জুলাই মাসে রাস্তার পিচ গলে যায়, ট্রেন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। হিথ্রো বিমানবন্দরে তাপমাত্রা ওঠে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

২০০৭: গ্রিসের বনে আগুন
জুন ও জুলাই মাসের টানা খরায় শুকিয়ে যায় মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এটি ইতালি, উত্তর মেসিডোনিয়া ও সার্বিয়ায় দাবানল উসকে দেয়।

তীব্র তাপদাহে হাঙ্গেরিতে মারা যায় অন্তত ৫০০ মানুষ।

২০০৩: প্রাণহানি ৭০ হাজার
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল- আগস্টের প্রথমার্ধে অপ্রত্যাশিত দাবদাহের মুখে পড়ে সবাই। পর্তুগালের দক্ষিণে আমারেলেজায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দাবদাহের সময় জোটের ১৬টি দেশে অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৭০ হাজারের মতো। এসময় ফ্রান্স-ইতালি উভয়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার করে প্রাণহানি দেখে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy