ধরুন আপনি একটি বড় ব্যবসায়িক ডিল, অথবা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছেন, অথবা হবু শ্বশুরের সাথে প্রথমবার দেখা করতে গেছেন। সবগুলো ক্ষেত্রেই আপনাকে প্রথমেই তাঁদের চোখে ভালো হতে হবে।
একজন মানুষের সাথে যখন কোনও নতুন মানুষের দেখা হয়, তার মনে নতুন মানুষটি সম্পর্কে ধারণা তৈরী হতে মাত্র ৫ সেকেন্ড সময় লাগে। এই ৫ সেকেন্ড তাই দারুন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ৫ সেকেন্ডে কথা বলে তো আর মানুষের সামনে ভালো ইমপ্রেশন তৈরী করা যায় না, কাজেই এক্ষেত্রে আপনাকে শরীরী ভাষা বা Body Language এর সাহায্য নিতে হবে।
কোনও মানুষের সামনে প্রথমবার হাজির হওয়ার তিন থেকে চার সেকেন্ডের মধ্যেই যদি আপনি তার সামনে একটি ভালো ইমপ্রেশন তৈরী করতে পারেন, তবে আপনাকে সে বিশ্বাসযোগ্য ও নিরাপদ মনে করা শুরু করবে।
এখন আমরা আপনাকে ৪টি ছোট ছোট কিন্তু কার্যকরী বডি ল্যাংগুয়েজ টিপস দেব। এই টিপসগুলো অনুসরন করে আপনি ৫ সেকেন্ড এর মধ্যেই নতুন মানুষটির সামনে নিজের একটি ভালো ভাবমূর্তি দাঁড় করাতে পারবেন।
১/ হাত-পা আড়ষ্ট করে রাখবেন না:
প্রথম দেখাতে আপনার ভাবভঙ্গী যেন এমন হয়, যাতে করে আপনার সামনের মানুষটি বুঝতে পারে আপনি একজন মুক্ত মনের মানুষ। এখানে শারীরিক ভঙ্গী বা body language খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীর আড়ষ্ট বা শক্ত করে রাখলে, তাতে নার্ভাসনেস এবং আত্মবিশ্বাসহীনতা প্রকাশ পায়।
একটু ব্যাখ্যা করা যাক: গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যদি বুকে আড়াআড়ি হাত বেঁধে দাঁড়ান বা খুব গুটিসুটি হয়ে বসেন, অথবা পা দু’টো প্রায় মিশিয়ে অথবা ক্রস করে দাঁড়ান বা বসেন তাহলে আপনার সামনের মানুষটি আপনার সাথে কথা বলতে খুব বেশি সহজ হতে পারবে না।
অন্যদিকে আপনি যদি হাত দুটো’কে সহজ ভঙ্গীতে রাখেন এবং বসা ও দাঁড়ানো – দুই সময়েই দুই পায়ের মাঝে বেশ কিছুটা জায়গা রাখেন – তাহলে আপনার সামনের মানুষটি সহজ বোধ করবে। তবে, সহজ হওয়ার মানে বেশি সহজ হওয়া নয়। অতি আত্মবিশ্বাসও যেন প্রকাশ না পায়। তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যতটা পারেন স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন।
১/ চোখে চোখে তাকান:
এই ব্যাপারটি হয়তো আপনি আগেই শুনেছেন, বা পড়েছেন। প্রায় সব communication skill টিপসের এটি একটি খুবই কমন অংশ। কিন্তু এর যথেষ্ঠ কারণ আছে। একজন মানুষের সাথে কথা বলার সময়ে চোখে চোখে তাকানো বা eye contact এর গুরুত্ব কমবেশি সবারই জানা আছে।
তাই এই ব্যাপারে খুব বেশি কথা না বলে, শুধু এটুকু বলি, কথা বলার সময়ে অপরজনের চোখে চোখ রাখলে তার চোখে আপনি একজন আত্মবিশ্বাসী ও আকর্ষণীয় মানুষ হয়ে উঠবেন।
অন্যদিকে যদি একেবারেই সামনের জনের চোখে না তাকান, অথবা খুবই কম তাকান, তাহলে তার মনে হতে পারে আপনি নার্ভাস বা অনাগ্রহী। এমনকি আপনাকে মিথ্যেবাদীও ভেবে বসতে পারে।
তবে খুব বেশি সময় ধরে টানা চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে সেটি আবার একটু উদ্ভট দেখায়। কাজেই মাঝে মাঝে চোখ সরিয়েও নিতে হবে। সামনের মানুষটির মনভাব ও চরিত্র বুঝে eye contact করা উচিৎ।
৩/ মুখে হাসি রাখুন:
Eye contact করার সাথে সাথে আপনার আরও যেই কাজটি করতে হবে, তা হল সামনের মানুষটির উদ্দেশ্যে একটি সুন্দর অথচ মুচকি হাসি দেয়া। – হয়তো অনেকবারই শুনেছেন, হাসি সংক্রামক। তাই আপনার দেয়া হাসি তার মুখেও ফুটে ওঠার সম্ভাবনা অনেকখানি।
এই হাসির কারণে সামনের লোকটি আপনার বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব সম্পর্কে একটি মেসেজ পাবে। – মনে রাখবেন মুখের সাথে সাথে যেন চোখও হাসে। হাসিটি যেন আন্তরিক মনে হয়। নাহলে উদ্ভট মনে হবে।
৪/ হ্যান্ডশেক করার সময়ে একটু সামনে ঝুঁকুন:
এখানে আপনাকে জাপানিজদের মত একেবারে ঝুঁকে মাটির কাছাকাছি চলে যেতে বলা হচ্ছেনা। বন্ধু বানানোর জন্য এত ঝোঁকার প্রয়োজন নেই।
আপনি যখনই একজন নতুন মানুষের সাথে প্রথমবারের মত পরিচিত হবেন তখন হাই-হ্যালো বিনিময়, অথবা হ্যান্ডশেক করার সময়ে তার দিকে হাল্কা ঝুঁকুন – একদম অল্প করে। এতে সামনের মানুষটির অবচেতন মনে একটি বার্তা যাবে যে আপনি তার প্রতি আন্তরিক ও বন্ধু ভাবাপন্ন।
তবে যদি বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে এরকম করেন তবে সেখানে একটি চিন্তার বিষয় আছে। মেয়েরা বিশেষ করে কোনও পুরুষের এই ধরনের আচরণকে আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি ভাব জমানোর চেষ্টা মনে করে থাকে। কাজেই সেক্ষেত্রে ঝোঁকার মাত্রা আরও কমিয়ে দিন।
আপনি হয়তো ভাবছেন মাত্র তিন থেকে পাঁচ সেকেন্ড এর মধ্যে এতকিছু কিভাবে হবে? – ব্যাপারটি নিজে করে দেখতে পারেন।তাহলেই বুঝবেন।
একজন নতুন মানুষের সাথে অল্প সময়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি করার তিনটি ধাপের প্রথম ধাপ এটি। বাকি ধাপগুলো জানতে “মাত্র ৯০ সেকেন্ডেই যে কাউকে বন্ধু বানিয়ে ফেলুন!” লেখাটি পড়ুন।
এই লেখাটি পড়ে যদি ভালো লাগে, তবে লাইক ও কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।
আর যদি মনে হয় এই লেখা থেকে অন্যরাও উপকার পাবে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন। নিয়মিত লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।