ভারতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসন্ন। এই পদে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের প্রাক্তন গভর্নর দ্রৌপদী মুর্মুকে। মঙ্গলবার (২১ জুন) এই মনোনয়ন ঘোষণা করে দলটি।
১৯৯৭ সালে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া দ্রৌপদী মুর্মু একজন আদিবাসী নারী। মঙ্গলবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দ্রৌপদী মুর্মু। বিরোধী দলগুলো নিজেদের প্রার্থী হিসাবে যশবন্ত সিনহার নাম ঘোষণা করেছে। তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নির্বাচিত হলে ৬৪ বছর বয়সী দ্রৌপদী মুর্মুই হবেন ভারতের প্রথম আদিবাসী নারী প্রেসিডেন্ট।
ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্ধারণে আগামী ১৮ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২১ জুলাই ভোট গণনা হবে এবং আগামী ২৫ জুলাই শপথ নেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তর থেকে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য এনডিএ পদপ্রার্থী হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। এর আগে ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই আদিবাসী নেত্রী।
এর আগে ২০১৭ সালে দলিত মুখ হিসাবে রামনাথ কোবিন্দকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছিল এনডিএ। এবার তারা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করল এক আদিবাসী নারীকে। সবকিছু ঠিক থাকলে, তার জয় পেতেও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কারণ জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় নাম্বার রয়েছে বিজেপির পক্ষেই। অবশ্য এদিনই বিরোধী দলগুলো সর্বসম্মত ভাবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে যশবন্ত সিনহার নামও ঘোষণা করে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন আদিবাসী ব্যক্তিকে এনডিএ প্রার্থী করতে চলেছে বলে বেশ কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল। এলক্ষ্যে সম্ভাব্য দৌড়ে ছিল চারটি নাম – অর্জুন মুন্ডা, জুয়েল ওরাওঁ, দ্রৌপদী মুর্মু এবং অনসূয়া উইকে। এই চার জনের মধ্যে আবার নারী হওয়ায় একটু এগিয়ে ছিলেন অনসূয়া উইকে এবং দ্রৌপদী মুর্মুই। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেলেন দ্রৌপদী মুর্মু।
ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের ময়ুরভঞ্জ জেলার বাসিন্দা দ্রৌপদী মুর্মু। পেশায় তিনি ছিলেন একজন শিক্ষিকা। ১৯৯৭ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন দ্রৌপদী। সেসময় বিজেপির এসটি সেলের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। এরপর ২০০০ এবং ২০০৫ সালে – পরপর দু’বার উড়িষ্যার রায়রাংপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
সেসময় রাজ্যটিতে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বিজু জনতা দলের জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেই সরকারের বাণিজ্য ও পরিবহন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন দ্রৌপদী। পরে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হন। ২০০৭ সালে সেরা বিধায়ক হিসাবে ‘নীলকন্ঠ’ পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
এরপর ২০১৫ সালে তাকে ঝাড়খণ্ড রজ্যের গভর্নর মনোনীত করা হয়। তিনিই ঝাড়খণ্ড রাজ্যের প্রথম নারী রাজ্যপাল ছিলেন। পাশাপাশি উড়িষ্যা রাজ্য থেকে নারী এবং আদিবাসী নেত্রী হিসেবে তিনি একটি রাজ্যের গভর্নরের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই পদেই ছিলেন তিনি। এবার কি তার গন্তব্য রাইসিনা হিলস? জবাব মিলবে আগামী ১৮ জুলাই। ওই দিনই ভারতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২১ জুলাই হবে ভোট গণনা। আর আগামী ২৪ জুলাই মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, একক ভাবে অথবা জোট গড়ে মোট ভারতের মোট ১৭টি রাজ্যে সরকার পরিচালনা করছে বিজেপি। কাজেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের থেকে মাত্র হাজারখানেক ভোট কম রয়েছে এনডিএ-র হাতে।
কাজেইই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়টি কার্যত বিজেপি শিবিরের হাতেই রয়েছে বলেও দাবি করছে সংবাদমাধ্যম।